হিজরি ক্যালেন্ডারের গুরুত্বপূর্ণ মাসগুলোর মধ্যে রজব একটি বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন মাস। এটি ইসলামের চারটি সম্মানিত মাসের অন্তর্ভুক্ত, যেসব মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ এবং আত্মসংযম, তাকওয়া ও ইবাদতে বেশি মনোযোগ দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। ‘রজব’ শব্দটির উৎস আরবি ‘তারজিব’, যার অর্থ সম্মান জানানো বা মর্যাদা প্রদান করা। প্রাচীন আরব সমাজে এই মাসকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কারণেই এমন নামকরণ হয়।
রজব মাসকে ‘রজবুল হারাম’ বলা হয়, কারণ এটি সেই চারটি পবিত্র মাসের একটি যেগুলোতে সংঘাত ও রক্তপাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সুরা তাওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন—বছরের মোট মাস বারোটি, যার মধ্যে চারটি মাস বিশেষভাবে পবিত্র। এসব মাসে নিজেদের ওপর জুলুম না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে এই চার পবিত্র মাসের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো—জিলকদ, জিলহজ, মুহাররম ও রজব। প্রথম তিনটি মাস ধারাবাহিক হলেও রজব তাদের থেকে পৃথকভাবে অবস্থান করে, যা একে আরও স্বতন্ত্র মর্যাদা দিয়েছে।
এই কারণেই রজবকে ‘রজবুল ফারদ’ বলা হয়, অর্থাৎ একক বা বিচ্ছিন্ন পবিত্র মাস। বাকি তিনটি পবিত্র মাসের সঙ্গে এর মাঝে কয়েক মাসের ব্যবধান থাকায় এর এই নামকরণ হয়েছে।
রজব মাসকে আবার ‘রজবে মুদার’ নামেও ডাকা হয়। হাদিসে এই নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। মুদার ছিল একটি প্রাচীন আরব গোত্র, যারা অন্যদের তুলনায় রজব মাসের পবিত্রতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করত। সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকেই রজবের সঙ্গে ‘মুদার’ নামটি যুক্ত হয়েছে।
শবে মেরাজের তাৎপর্য
রজব মাসের সবচেয়ে বড় গুরুত্ব হলো—এই মাসেই সংঘটিত হয়েছে ইসলামের ইতিহাসের মহান অলৌকিক ঘটনা ইসরা ও মেরাজ। এই রাতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা এবং সেখান থেকে আসমানে ভ্রমণ করানো হয়। পবিত্র কোরআনের সুরা বনি ইসরাঈলের প্রথম আয়াতে এই ঘটনাকে আল্লাহ তায়ালা স্মরণ করেছেন।
এই ঘটনা নবীজির মর্যাদা বৃদ্ধি, তাঁর অন্তরকে শক্তিশালী করা এবং আসমান ও জমিনের নিদর্শন দেখানোর উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়। দুঃখ ও পরীক্ষার সময় পার করার পর এটি ছিল রাসুল (সা.)-এর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সান্ত্বনা।
ফিলিস্তিন ও মসজিদুল আকসার গুরুত্ব
ইসরা ও মেরাজের ঘটনা মুসলমানদের কাছে ফিলিস্তিন, জেরুজালেম এবং মসজিদুল আকসার ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়। আল-আকসা মুসলিম উম্মাহর অন্যতম পবিত্র ইবাদতস্থল। রজব মাস আমাদেরকে শুধু আত্মশুদ্ধির কথাই নয়, বরং জুলুম ও দখলদারিত্ব থেকে পবিত্র ভূমিকে মুক্ত করার দায়িত্বের কথাও মনে করিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:








