কুমিল্লা শহরের মোঘলটুলীতে গোমতী নদীর কোলঘেঁষে অবস্থান ঐতিহাসিক শাহ সুজা মসজিদের। প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের বেশি সময় ধরে টিকে থাকা স্থাপনাটি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ হিসেবে আজও স্বমহিমায় উদ্ভাসিত।
মসজিদের নামকরণ, প্রতিষ্ঠাতার নাম ও সঠিক নির্মাণকাল নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও ধারণা করা হয়, ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দে এটি নির্মিত হয়। আয়তনে ছোট হলেও মসজিদটির ইতিহাস ও স্থাপত্যশৈলী আভিজাত্যের এক অনন্য প্রতীক হয়ে আছে।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় বড় গম্বুজের সঙ্গে দুটি ছোট গম্বুজ, চার কোনায় অষ্টকোণাকার মিনার, তিনটি প্রবেশদ্বার ও তিনটি মেহরাব। বাইরের দেয়াল ও প্রবেশপথে ছিল শৈল্পিক কারুকাজ। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বারান্দা, কক্ষ ও নতুন মিনার সংযোজনের ফলে মসজিদের আদি রূপ কিছুটা নষ্ট হয়েছে।
ঐতিহাসিকদের মতে, মসজিদটি মূলত কুমিল্লায় মোঘল ফৌজদারের উদ্যোগে নির্মিত হয় এবং সুবেদার শাহ সুজার নামে এর নাম রাখা হয়। তবে, এর নির্মাণ ইতিহাস নিয়ে নানা জনশ্রুতিও রয়েছে। কারো মতে শাহ সুজা ত্রিপুরা বিজয়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এটি নির্মাণ করেছিলেন। আবার কারো মতে, ত্রিপুরার মহারাজ গোবিন্দ মানিক্য তাঁর স্মৃতিকে অমর করতে মসজিদটি নির্মাণ করান।
তবে, স্থানীয়রা জানায়, প্রায় চারশো বছর আগে মোঘল সম্রাজ্যের সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় একই নকশার বেশ কিছু মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে কুমিল্লার এটিও একটি বলে ধারনা তাদের।
প্রাচীন এই মসজিদে নামাজ আদায় করে আলাদা প্রশান্তি পায় মসুল্লিরা। শুক্রবার বিভিন্ন এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এখানে এসে জুমার নামাজ আদায় করে। ভেতরে এসি বা ফ্যান না থাকেলও সব সময় ঠান্ডা থাকে বলে জানান, মসুল্লিরা।
মসজিদ কমিটির সাবেক সাধারন সম্পাদক সামছুল হক জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে এই মসজিদে নামাজ আদায় করে মানুষ। আর জুমার দিন মূল মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ায় স্থানীরা বারান্দায় অতিরিক্ত ছাউনি দিয়ে নামাজের ব্যবস্থা করে।
অন্যান্য মসজিদে যোহরের নামাজ দেড়টায় হলেও শাহ সুজা মসজিদে আদায় করা হয় একটায়। এবিষয়ে মসজিদের ঈমাম মুফতি খিজির বলেন, দূর দূরান্ত থেকে মসুল্লি আসে এই মসজিদে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি নিজের জন্য দোয়া করতে। তাই দূরের মসুল্লিদের কথা ভেবেই এই মসজিদে যোহরের নামাজ একটায় আদায় করা হয় যা কখনও পরিবর্তন হয় না।
তিনি আরো জানান, সব মসজিদেই জ্বীনেরা নামাজ আদায় করে। এজন্য মসজিদের দরজা বন্ধ করার পর লাইট না জ্বালিয়ে রাখাই উত্তম। আর শাহ সুজা মসজিদে জ্বীনদের আনাগোনা বেশি। তিনি নিজেও এর প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানান এই মসজিদের ইমাম মুফতি খিজির ।
এদিকে, মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মসুল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারে না। এতিমখানার ভবনটিও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। জায়গা থাকলেও অর্থের অভাবে এসবের সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই, সরকারি সহযোগিতার আহ্বান জানান, শাহ সুজা মসজিদের ইমাম মুফতি খিজির।
তবে, ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে যে মতই থাকুক, গোমতীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা শাহ সুজা মসজিদ আজও কুমিল্লার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ইসলামি স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন।
ভিডিও লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=F8srjC6idwc
আরও পড়ুন:







.jpg)
