বৃহস্পতিবার

১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩ পৌষ, ১৪৩২

হাসনাতকে পরবর্তী টার্গেট; ভারতীয় সাবেক সেনা কর্মকর্তার পোস্ট

সুজন মাহমুদ

প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০:৪৯

আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০:৫০

শেয়ার

হাসনাতকে পরবর্তী টার্গেট; ভারতীয় সাবেক সেনা কর্মকর্তার পোস্ট
ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। হাদির পর এবার সন্ত্রাসীদের টার্গেটে রয়েছেন আরেক জুলাই যোদ্ধা, দেশপ্রেমিক তরুণ রাজনীতিবিদ হাসনাত আব্দুল্লাহ।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, ওসমান হাদি-সহ মোট ৭০ জনের একটি তালিকা করেছে সন্ত্রাসীরা। এর মধ্যে রয়েছেন রাজনীতিবিদ, জুলাই যোদ্ধা ও সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্টরা।

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন জুলাই যোদ্ধা, দেশপ্রেমিক ও ভারতবিরোধী এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। এসব খবরের মাঝেই মঙ্গলবার হাসনাতের ছবি-সহ হত্যার হুমকি দিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছে ভারতের সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। এক্সে করা একটি পোস্টে হাসনাতকে সরাসরি হুমকি দিয়েছেন ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল অজয় রায়না।

হাসনাতের ছবি সম্বলিত ‘ব্যাটালিয়ান সেভেন্টি ওয়ান’ নামের একটি অ্যাকাউন্টের পোস্ট শেয়ার করে অজয় লিখেছেন, হাদির পর পরবর্তী টার্গেট হাসনাত আব্দুল্লাহ। তার দেওয়া ওই পোস্টটি শেয়ার করে রওশন হক নামের এক বাংলাদেশি জবাব দিয়ে লিখেছেন, যিনি পোস্ট করেছেন তিনি একজন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য, ২৯টি বইয়ের লেখক এবং একজন চলচ্চিত্র পরামর্শক। তার দেওয়া টুইট পোস্টে দাবি করেছেন, হাদির ওপর হামলার পেছনে ভারত ছিল। তিনি হুমকি দিয়ে লিখেছেন, হাসনাতই হচ্ছে তাদের পরবর্তী লক্ষ্য। পোস্ট শেয়ারকারী এই বাংলাদেশি নারী হুঁশিয়ারি দিয়ে আরও লিখেছেন, তারা কি ভুলে গেছে—বাংলাদেশ যদি চায়, তাহলে ভারতের অভ্যন্তরেও একই খেলা খেলতে পারে?

এর আগে সোমবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ ভারতকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশকে ফিলিস্তিন বানাতে চায়। যারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সম্ভাবনা, ভোটাধিকার ও মানবাধিকারকে বিশ্বাস করে না, ভারত তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। এমন চলতে থাকলে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে সেভেন সিস্টার্সকে আলাদা করে দেওয়া হবে।

হাসনাতের এই বক্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাংলাদেশে পারমাণবিক হামলার ইঙ্গিত দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এমন বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিপজ্জনক’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে একীভূত করা বা আলাদা করার ধারণা সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিপজ্জনক। গত এক বছরে বারবার এমন বক্তব্য আসছে যে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে বাংলাদেশে যুক্ত করা উচিত। ভারত একটি বড় দেশ, একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। বাংলাদেশ কীভাবে এমন কথা ভাবতে পারে? এ ধরনের শত্রুতামূলক আচরণ চলতে থাকলে ভারত চুপ থাকবে না। প্রয়োজনে শিক্ষা দিতে হতে পারে।’

এদিকে হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার পর ফাঁস হওয়া একটি অডিওতে হাসিনাকে বলতে শোনা গেছে, নিজেরাই নিজেদের গুলি করছে। তাদের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে, ঘরবাড়ি ছাড়া করা হচ্ছে। তিনি ওই অডিওতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের উসকানি দিয়ে এবং জুলাই যোদ্ধাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে আরও বলেন, যতজনের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তারা সবাই রাস্তায় নামলে ওরা যাবে কোথায়। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলতে শোনা যায়, হাসিনার কিলিং মিশন বাস্তবায়নে ঢাকায় প্রবেশ করবে একদল দক্ষ ঘাতক।

হাসিনার কিলিং মিশনের আরও একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। ফাঁস হওয়া ওই অডিওতে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, মাঠে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেই। যা করার তাদেরই করতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ধরে ধরে হত্যার কথাও বলেন তিনি।

এর আগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর শীর্ষ নেতাদের ওপর দফায় দফায় হামলা হয়েছে। দলটির ‘১৬ জুলাই: মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি পণ্ড করতে বিভিন্ন স্থান থেকে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী দুই দিন আগে আশপাশের এলাকা থেকে গোপালগঞ্জ শহরে হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো করে আওয়ামী লীগ। টার্গেট ছিল—এনসিপিকে ঢুকতে দেওয়া হলেও তাদের জীবিত বের হতে দেওয়া হবে না; বিশেষ করে শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা।

অভিযোগ রয়েছে, তাদের হত্যা করতে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিল খুনি হাসিনা। দেশের একটি পত্রিকায় বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা নিষিদ্ধ ঘোষিত গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন।

‘ওরা নাকি গোপালগঞ্জে যাচ্ছে। টুঙ্গিপাড়ায় আমার বাবার কবর ভেঙে ফেলার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এবার টুঙ্গিপাড়ায় হামলা চালাবে। তোমরা বসে আছ কেন? যে যেভাবে পার প্রতিহত কর। গোপালগঞ্জে কোনোভাবেই যাতে ওরা ঢুকতে না পারে। কোনো ধরনের কর্মসূচি যাতে করতে না পারে। মনে রাখবা, গোপালগঞ্জের মাটি থেকে ওদের কেউ যাতে অক্ষত অবস্থায় ফিরে যেতে না পারে।’

হাদিকে হত্যাচেষ্টার পর হামলাকারীরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আবার এ ঘটনার পর হাসিনার ফোনকল ফাঁস, ভারতের সেনা কর্মকর্তার সরাসরি হাসনাতকে লক্ষ্য করে পোস্ট এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রীর পারমাণবিক হামলার হুমকি নতুন করে দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের মাঝে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।



banner close
banner close