কয়েক দিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত নাম গণঅধিকার পরিষদের সাবেক কর্মী তারেক রহমান। সম্প্রতি তাঁর কিছু কার্যক্রম দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। গণঅধিকার পরিষদ থেকে বেরিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজস্ব রাজনৈতিক সংগঠন ‘আমজনতার দল’।
তবে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে এখনো জনগণের কাছে তেমন পরিচিত নন তারেক। কর্মী–সমর্থকবিহীন এই দলের কোনো উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি না থাকলেও নানা হাস্যকর কার্যক্রমের কারণে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচন কমিশনের শর্ত যথাযথভাবে পূরণ না করেই দলের নিবন্ধন চান তারেক। নিবন্ধন না পেয়ে নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে আমরণ অনশন শুরুর নাটকও সাজিয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে তাঁর শালিকার দেওয়া সাক্ষাৎকারে, যেখানে তিনি জানিয়েছেন—অনশনের মাঝেই তারেক একাধিকবার খাবার খেয়েছেন।
কখনো দলের নিবন্ধন, কখনো দলীয় অফিসের জন্য প্রকাশ্যে অর্থ চেয়েও দেখা গেছে তাকে। এমনকি বন্যা বা অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগকেও অর্থ সংগ্রহের সুযোগে পরিণত করেছেন তিনি। এসব কারণে অনেকেই তাকে ‘বিকাশ তারেক’ বা ‘আম তারেক’ বলে সম্বোধন করেন।
ফেসবুকে তারেকের পোস্টগুলোর মন্তব্য বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ মানুষ তাঁকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে। কিন্তু এসব মন্তব্যকে তিনি গুরুত্ব দেন না। বরং কিছু সময় পর আবারও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিকাশ বা নগদ নম্বর দিয়ে নতুন করে টাকা চাইতে দেখা যায় তাঁকে।
এতসব প্রশ্নের পর স্বাভাবিকভাবেই বিষয় উঠেছে—এভাবে সংগ্রহ করা অর্থ আসলে কোথায় ব্যয় হচ্ছে?
সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে টিম বাংলা এডিশন সম্প্রতি কড়াইল বস্তির অগ্নিকাণ্ড পরবর্তী সময়ে তারেকের কার্যক্রম অনুসন্ধান করে।
তারেক ফেসবুকে দাবি করেন—তিনি ১,২০০ মানুষের জন্য খাবারের আয়োজন করেছেন এবং প্রতিটি হাঁড়ির খরচ ১১ হাজার টাকা। কিন্তু ফুলকপি ও ধনেপাতা মেশানো সাদামাটা সেই খিচুড়ির খরচ কীভাবে ১১ হাজার টাকা হয়—তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। এ বিষয়ে জানতে তারেকের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো ফোন ধরেননি।
এ ছাড়া ফেসবুক লাইভেও অর্থ চাইতে দেখা যায় তাকে। অভিযোগ আছে, ঘোষিত ১,২০০ মানুষের বদলে অর্ধেকেরও কম মানুষকে খাবার দেওয়া হয়েছিল।
তারেকের এসব কর্মকাণ্ড শুধু তাঁকেই বিতর্কিত করছে না, বরং এমন প্রতারণার কারণে মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাসও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–এর যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন,
“দুর্যোগকালে সংগৃহীত অর্থ কোথায় এবং কীভাবে ব্যয় হয়েছে—তা জনগণের সামনে উপস্থাপন করা জরুরি। এতে মানুষের আস্থা বাড়বে।”
এদিকে তারেক বর্তমানে যে অফিসে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন, তা নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। ওই ফ্লোরের প্রকৃত মালিক শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন—তারেক তাঁর অনুমতি ছাড়াই সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে জোর করে ফ্ল্যাট দখল করেছেন।
এতসব বিতর্কের মাঝেও সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন তারেকের ‘আমজনতার দল’কে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম দফায় আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলেও পরবর্তীতে নিবন্ধন মেলায় সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনশন করলে কি নিবন্ধন পাওয়া যায়—এ প্রশ্নও উঠেছে।
এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের চার সদস্যকে একাধিকবার ফোন করে বাংলা এডিশন টিম। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমান ফোন ধরলে জানান, তিনি বিদেশে থাকায় বিস্তারিত জানেন না। তবে তিনি কোনো তথ্য যাচাই না করেই দলটির নিবন্ধন সংক্রান্ত ফাইলে স্বাক্ষর করেছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে তারেককে বারবার ফোন করা হলেও তিনি কোনো কল রিসিভ করেননি।
এ অবস্থায়, আম তারেক–এর মতো এক ব্যক্তি যে জাতীয় পর্যায়ের প্রতারণায় জড়িত—এই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন:








