আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। ঘোষিত তালিকায় কিশোরগঞ্জ-৪ আসন (ইটনা–মিঠামইন–অষ্টগ্রাম) থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান।
গত ৩ নভেম্বর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ নাম ঘোষণা করেন।
মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। প্রতিদিনই তিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কর্মীসভা করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। প্রতিটি সভায়ই তিনি জামায়াতকে লক্ষ্য করে কঠোর বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
ইটনা–মিঠামইন–অষ্টগ্রাম এলাকায় জামায়াত (রাজাকার) নির্বাচনে জিতলে এবং তারা সরকার গঠন করলে বিষপান করবেন—এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হাত তুলেন দেখি… রাজাকারের পক্ষে হাত তুলেন দেখি… একটা হাতও রাজাকারের পক্ষে ওঠে না। এরপরেও এরা নির্বাচন করে সরকার গঠন করবে! ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামে এরা পাস কইরা ফেলবো… আমি বিষ খাইয়্যাম।
বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, এরা যে বেঁচে আছে, এটাই শেখ মুজিবুর রহমানের দয়া, জিয়াউর রহমানের দয়া, খালেদা জিয়ার দয়া। ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার পায়ে ধরছে—‘ম্যাডাম আমাদের বাঁচান’। তখন বাঁচাইছিল। আর এখন সাপ ফণা তুলছে। বিএনপিরে বলে চান্দাবাজ, ধান্দাবাজ, চোর-বাটপার—এগুলো জামায়াতে ছাড়া আর কেউ বলে না। এরা মুনাফেক, এরা বেইমান, এরা অকৃতজ্ঞ। যারে দিয়া বাঁচে, তারেই মারে।
অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান জামায়াতের আমিরকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, এই মোল্লারা কি জানোস রে—যারা জামায়াতে যোগ দাও! আসো, ফজলুর রহমানের সঙ্গে মুখোমুখি হও। আমি জামায়াতের আমিরকে চ্যালেঞ্জ করছি—আমি যে আরবি শিক্ষায় লেখাপড়া করেছি, তিনি তা করেননি। কারণ তিনি বাংলা পড়েছেন, জাসদ করেছেন, আল্লাহ মানতেন না। অথচ আজ তিনি ‘আমিরুল মুমিনিন’ হয়ে গেছেন!
তিনি আরও বলেন— হ্যাঁ, আমি চ্যালেঞ্জ করলাম—উনি যদি বলতে না পারেন যে তিনি জাসদ ছাত্রলীগ করতেন না, তবে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। আর জাসদ ছাত্রলীগ করা মানেই—৯০% আল্লাহ-রাসুলকে বিশ্বাস করে না। আর এখন তিনি আমিরুল মুমিনিন! এই সেই জামায়াত—যারা আমার ৩০ লাখ লোককে হত্যা করেছে, যারা আমার মা–বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে, যারা আমার সোনার বাংলা পুড়িয়ে ছারখার করেছে। ৭১ সালে আমি সেই মুক্তিযোদ্ধা—মাকে কাঁদিয়ে, বাবার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যুদ্ধ করেছি। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস—শ্রাবণের বৃষ্টিভেজা রাতে ভাটিগাঁওয়ে থেকে থেকে পাঞ্জাবিদের বুকে গুলি করেছি—দেশ স্বাধীন করেছি। এখন কি সেই জামায়াত–রাজাকারের হাতে আমার মাথা তুলে দেব? দয়া করে আপনারাই বিচার করুন।
ফজলুর আরও বলেন, আমি যদি পার্লামেন্টে যাই—যারা বলে এই দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, রক্তের সাগর সৃষ্টি হয়নি, বরং গণ্ডগোল হয়েছিল যা ইন্ডিয়া লাগিয়েছিল—এমন সব রাজাকার, আলবদরদের দেখে নিব। যদি আমি সংসদে যেতে পারি—তাদের দেখেই নেব।
তিনি বলেন, সেই রাজাকার, আলবদর, আলশামস ৫৪ বছর পরে আইসা বলবে— ‘না, কোন যুদ্ধ হয় নাই; যারা যুদ্ধ করছে তারা আল্লাহর কাছে মাফ চাও। এই হারামজাদারা, রাজাকারের বাচ্চারা তোরা মাপ চা। তোদের বাপ-দাদা, চৌদ্দ পুরুষ এক হয়ে মাফ চাইলে আমরা তোদের ক্ষমা করব না। মুক্তিযুদ্ধ ভাল ছিল না খারাপ ছিল? এই যে স্বাধীন হয়েছে— এটা ভালো ছিল না খারাপ ছিল? মুক্তিযোদ্ধা ভালো ছিল, না রাজাকার ভালো ছিল? আমি আপনাদেরকে জিজ্ঞাসা করি।
তিনি আরও বলেন, সেই রাজাকারের দলের নাম হলো জামায়াত। আল্লাহর দোহাই লাগে, আপনাদের পায়ে হাত দিয়ে বলি— মনে করছিলাম জামায়াত বুঝি মানুষ হইছে, কিন্তু এখন দেখি এরা হচ্ছে নিমুকহারাম আর বেইমান। তাদেরকে ক্ষমা করা হয়েছিল, কিন্তু তারা মানুষ হয় নাই। এই দেশটাকে আবার ওই একাত্তরের রাজাকার-আলবদরের হাতে দিতে চায়— এটা কি আপনারা সমর্থন করেন? যদি সমর্থন না করেন, আমারে পছন্দ না লাগলে ভোট দিয়েন না। কিন্তু আমি হাত জোড় করে বলি— সন্ধ্যার সময় রাজাকারের বাচ্চারারে ভোট দিয়েন না, আল্লাহর দোহাই লাগে আপনাদের।
তিনি আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আল্লাহর দোহাই লাগে— দেশ থাকবে না, মানুষ থাকবে না, বিজ্ঞান থাকবে না, শিক্ষা থাকবে না, বিবেক থাকবে না, মনুষ্যত্ব থাকবে না, নারীর স্বাধীনতা থাকবে না, নারী শিক্ষা থাকবে না।
ফজলুুর রহমান আরও বলেন, জামায়াতে ইসলাম— ইসলাম না। জামায়াতে ইসলাম হলো জামার মধ্যে ইসলাম। ওরা আসল ইসলাম না। আমি জামায়াতে ইসলাম কইলে কি ইসলামের বিরুদ্ধে কই? না। ইসলামের মৌলভী, আলেম, মাওলানারা আছেন— আমি তাদের সালাম করি। কিন্তু জামায়াতে ইসলাম ইসলাম না। রাজাকাররা কোনো ইসলাম না। আল্লাহ আমাকে বেহেশতে নেবে নাকি দোযখে নেবে— তুমি সার্টিফিকেট বিতরণ কর? একটা চড় লাগাবো! বেহেশতে–দোযখে দেওয়ার মালিক আল্লাহ। দাড়িপাল্লায় ভোট দিলে বেহেশতে যাবেন— নাউজুবিল্লাহ!
ফজলুর রহমানের একের পর এক এইরকম বিস্ফোরক মন্তব্য কি দলের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে নাকি দলকে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করবে, এরকমটাই প্রশ্ন রয়েছে জনমনে।
আরও পড়ুন:








