শুক্রবার

১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৪ পৌষ, ১৪৩২

হাসিনাকে ফেরত না দিতে যেসব অজুহাত খুঁজছে মোদী সরকার

সুজন মাহমুদ

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর, ২০২৫ ১৪:৪০

আপডেট: ২১ নভেম্বর, ২০২৫ ১৪:৪১

শেয়ার

হাসিনাকে ফেরত না দিতে যেসব অজুহাত খুঁজছে মোদী সরকার
হাসিনাকে ফেরত না দিতে যেসব অজুহাত খুঁজছে মোদী সরকার

২৪ এর জুলাই গণহত্যার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর থেকে তাকে বাংলাদেশে ফেরত আনার দাবি আরও জোরালো হচ্ছে। শহীদ পরিবার থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে তার দণ্ড কার্যকরের দাবি দিন দিন তীব্র হচ্ছে। হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে। এ ব্যাপারে দিল্লির ওপর চাপ অব্যাহত রাখতেও দাবি তুলেছে জুলাই যোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্যরাসহ রাজনৈতিক দলের নেতারাও।

এরইমধ্যে, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ফেরাতে নানা তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকারও। ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারিসহ ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এদিকে, খুনি হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে দিল্লির একাধিক কূটনৈতিক সূত্র দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেছে, এই রায়ে ভারত সরকার আন্তর্জাতিকভাবে এক ধরনের চাপে পড়েছে। আগামীতে এ চাপ আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছে দিল্লি। তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, প্রত্যর্পণের বিষয়ে বাংলাদেশের দাবিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যানের সুযোগ সীমিত হওয়ায় নানা ধরনের অজুহাত দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে মোদী সরকার।

ভারতীয় নীতি-নির্ধারকরা এ বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। দেশটির প্রধান গণমাধ্যমগুলো খুনি হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করছে। সেখানকার প্রথমসারির একাধিক গণমাধ্যম হাসিনার বিরুদ্ধে দেয়া রায়ের চেয়ে রায়ের প্রক্রিয়ায় হাসিনা অডিও বার্তায় যা বলেছেন, তা ফলাও করে প্রচার করছে।

বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছে, ভারত হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করুক আর না বা করুক, তাকে ফেরত আনার উদ্যোগ অবশ্যই জোরালো করতে হবে। তাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত যে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও চুক্তি লঙ্ঘন করছে বাংলাদেশের উচিত হবে সেই বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরে দিল্লির মুখোশ উন্মোচন করা। এক্ষেত্রে ভারতের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের জন্য প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মিত্রদের সহযোগিতা নেয়া জরুরি। একইসাথে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে যত বিকল্প পথ আছে সব অবলম্বন করা দরকার বলে মনে করেন সাবেক কূটনৈতিক সাকিব আলী।

তবে, এ ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন জোরালো হয়ে দেখা দেবে ‘ভারত যদি শেখ হাসিনাকে ফেরত না দেয়, তাহলে বাংলাদেশের হাতে কী আছে’?

২০১৩ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, এর লক্ষ্য ছিল অপরাধ ও সন্ত্রাস দমনে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তোলা এবং দুই দেশের মধ্যে পলাতক আসামি ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সুস্পষ্ট করা।

এখন প্রশ্ন হলো, কোন কোন অপরাধে প্রত্যর্পণ করা যায়?

২০১৩ সালে করা দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী, যে অপরাধে ভারতে ও বাংলাদেশে কমপক্ষে এক বছরের কারাদণ্ড হতে পারে, তা প্রত্যর্পণের যোগ্য। এর মধ্যে হত্যা, সন্ত্রাসবাদ, অপহরণ, সহিংস অপরাধ ছাড়াও আর্থিক ও রাজস্ব ক্ষেত্রের অপরাধও অন্তর্ভুক্ত। একইসাথে সহায়তা করা, উসকানি দেয়া বা সহযোগী হিসেবে অংশ নেয়াও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

আবার, কোনো ব্যক্তি অভিযুক্ত, অভিযুক্ত হয়ে পলাতক বা দণ্ডিত হয়ে অন্য দেশে পালিয়ে গেলে দুই রাষ্ট্রই তাকে ফেরত চাওয়ার আবেদন করতে পারে। এর উদ্দেশ্য হলো, বিচার সম্পন্ন করা বা পালিয়ে যাওয়া দণ্ড কার্যকর করা।

এসবের মাঝেই, বুধবার দিল্লিতে দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডক্টর খলিল এবং অজিত দোভালের মধ্যে দ্বিপাক্ষীক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ওই, বৈঠকে হাসিনাকে ফেরতের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না সেবিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানা যায়নি। আর আইসিটি আদালতের রায়ের পর কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত হাসিনা এবং কামালকে প্রত্যপর্ণে দিল্লিকে অনুরোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

এরইমধ্যে, কূটনৈতিক পত্র প্রস্তুতও হয়ে গেছে। তবে এখনও দিল্লির কাছে পৌঁছায়নি বলে জানা গেছে।



banner close
banner close