শুক্রবার

১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৪ পৌষ, ১৪৩২

ভারতীয় মিডিয়া ব্যবহার করে নির্দোষ সাজছে হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর, ২০২৫ ১০:৩৩

আপডেট: ২১ নভেম্বর, ২০২৫ ১০:৩৪

শেয়ার

ভারতীয় মিডিয়া ব্যবহার করে নির্দোষ সাজছে হাসিনা
ছবি: সংগৃহীত

১৭ নভেম্বর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার জীবনে এক বিশেষ দিন। ১৯৬৭ সালের এই দিনে তিনি পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ৫৮ বছর পর এই দিনেই মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-এক।

বর্তমানে ভারতে পালিয়ে আছেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। অর্থাৎ ভারতেই তার রাজনীতির শুরু আর ভারতেই শেষ। ১৯৮১ সালে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে, বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, রাজনীতির মাধ্যমেই তিনি তার বাবার হত্যার প্রতিশোধ নেবেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে হাসিনার রাজনীতি অনেকটা ম্যাজিকের মতো। দিল্লী থেকে বাংলাদেশে আসলেন, বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিলেন, গুম-খুন ও লুটপাট শেষে আবারো দিল্লিতেই ফিরে গেলেন।

ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হাসিনা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ১৬ বছর যাবত তার অপকর্ম করে গেছে। অথচ তিনিই এখন বিদেশি মিডিয়া ব্যবহার করে নিজেকে মজলুম প্রমাণ করতে চাইছেন।

২০২৪ সালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হাসিনার নির্দেশে নির্বিচারে গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেসময় প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছে। দেশে-বিদেশে এটি নিয়ে তুমুল আলোচনা চললেও এখনও নিজের দোষ স্বীকার করতে নারাজ হাসিনা।

এর পরিবর্তে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে হাসিনা ও তার দলের পলাতক নেতারা। বিশেষ করে, ভারতীয় গণমাধ্যমের মুখরোচক খবরে বিভ্রান্তি বাড়ছে রাজনৈতিক মহলে।

ভারতীয় মিডিয়াও একের পর এক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন খবর প্রচারের মূল উদ্দেশ্য হাসিনাকে বিশ্ববাসীর কাছে মজলুম হিসেবে প্রমাণ করা। এমনকি হাসিনা ও তার দলের নেতারা নিয়মিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার দিয়ে আসছেন। তাদের প্রত্যেকটি সাক্ষাতকারেই জুলাই যোদ্ধাদের সন্ত্রাসী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি দেশের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা

এসবের মাঝে, ১৭ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়ার পর আবারো মিথ্যা ও বানোয়াট খবর প্রচার করে যাচ্ছে ভারতীয় মিডিয়া। তাদের দাবি, রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই রায় দেয়া হয়েছে। অথচ সকল আইনী বিধি-বিধান মেনেই হাসিনার রায় ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

হাসিনা ভারতে পালানোর পর যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সংযুক্ত আরব-আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের চেষ্টা চালিয়েছেনতবে সব দেশই তার এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেশেষ পর্যন্ত দিল্লিতেই থাকতে হচ্ছে তাকে

হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন বলেছিলেন, ভারতকে তিনি যত কিছু দিয়েছেন, ভারত তা সবসময় মনে রাখবে। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে ভারতের সাথে ট্রানজিট সুবিধাসহ অনেক দেশবিরোধী চুক্তি করেছেন। আর সেজন্যই হয়ত হাসিনার দুর্দিনে ভারত তার পাশে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলী বলেন, হাসিনার গড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অনেক নির্দোষ মানুষের বিচার হলেও তখন ভারত কিছু বলেনি। তাই এখন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যাচার করছে দেশটি।

তিনি আরো বলেন, হাসিনার বিচারের ক্ষেত্রে আইনী প্রক্রিয়ায় কোনো ঘাটতি ছিলো না। এমনকি একজন রাজস্বাক্ষীও রাখা হয়েছিল। সুতরাং মামলার স্বচ্ছ্বতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।

এই পরিস্থিতিতে ভারত খুনি হাসিনাসহ শতাধিক অপরাধীকে আশ্রয় দিয়ে উল্টো বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এরমধ্য দিয়ে, ভারত অপরাধী বা খুনিদের অভয়ারণ্য হয়ে গেছে কি না, তা নিয়ে জনমনেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।



banner close
banner close