খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে এমন অভিযোগ বহুদিনের। বদলি-বাণিজ্য, সংযুক্ত বদলি, ভুয়া পদোন্নতি। এসব অনিয়মের কারণে দপ্তরে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রশাসনিক পরিবর্তনের সময় প্রভাবশালী স্টেনোগ্রাফার ফরিদ আহমেদ মোল্লাকে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে শূন্যপদে বদলি করা হয়। কিন্তু মাত্র ১৪ মাসের মধ্যেই তিনি আবার খুলনায় ফিরতে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। এ কারণে দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কথা হলো, খুলনায়ই কেন ফিরতে হবে তার? এখানে মধুটা কি? কিসের স্বার্থে পুনরায় খুলনায় ফিরতে চাচ্ছেন তিনি? প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে খোদ বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর ও জনমনে।
তথ্য অনুযায়ী, বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের স্টেনোগ্রাফার ফরিদ আহমেদ মোল্লা সাবেক বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) স্বাক্ষর জাল করে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার ২৪ জন কর্মচারীর জন্য উচ্চতর পদে ভুয়া পদোন্নতির আদেশ জারি করেন। এই আদেশ জারির বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে সরকারি কর্মচারি শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়। একই সঙ্গে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ফরিদ আহমেদ ও তার স্ত্রী পলি আহমেদের বিরুদ্ধে মামলাও করে দুদক।
বাগেরহাটের কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত অফিস সহকারী আব্দুল আজিজ জানান, ২০২১ সালে জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে তাকে অফিস সহকারী পদ থেকে ক্যাশিয়ার হিসেবে ভুয়া পদোন্নতি দেওয়া হয়। একইভাবে সাতক্ষীরা তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহায়ক রফি আহমেদকে অফিস সহকারী পদে, মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী আছমা খাতুনকে অফিস সহায়ক, তালা হাসপাতালের ওটি বয় সৈয়দ রহমত হোসেনকে কার্ডিওগ্রাফারসহ মোট ২৪ জনকে একই কায়দায় জালিয়াতির মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এসব কর্মচারীকে পরে শোকজ করা হলেও মূল হোতা স্টেনোগ্রাফার ফরিদ আহমেদ বহুদিন ধরেই নির্বিঘ্নে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
২০২১ সালে দুদকের মামলায় আদালত তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর পর ১৪ জানুয়ারি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিধি অনুযায়ী বরখাস্তকালীন সময়ে কেবল খোরপোষ ভাতা পাওয়ার কথা থাকলেও তিনি পূর্ণ বেতন-ভাতা গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি ‘লঘু শাস্তি’ পেয়ে আবারও চাকরিতে ফিরে আসেন।
বর্তমানে তার কর্মস্থল পাবনা হলেও তিনি অধিকাংশ সময় খুলনায় অবস্থান করেন এবং বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মচারীদের ওপর প্রভাব বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান বলে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে স্টেনোগ্রাফার ফরিদ আহমেদ এর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য দপ্তরের শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপনে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:








