প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে গণভোটের আয়োজন করা হবে বলে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া ঘোষণায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ঘোষণায় সংকটমুক্ত স্বচ্ছ নির্বাচনের আশা করেছিলাম, কিন্তু সেখানে সেই সংকটটা রয়েই গেলো।
তিনি আরও বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং আদেশের ওপর নভেম্বর মাসেই গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দফা গণদাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চলমান ও ঘোষিত আট দলীয় কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের সঞ্চালনায় মগবাজার দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গোলাম পরওয়ার বলেন, ড. ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে অনেক মৌলিক কথা তুলে ধরেছেন। কিন্তু বিদ্যমান যে রাজনৈতিক সংকট, বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোকে পরিবর্তন করে নতুন রাষ্ট্র কাঠামোর জন্য যে সংস্কার প্রস্তাব, সেই জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার প্রয়োজনে গণভোট আয়োজনের যে গণদাবি, তারপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে এত দিন যে আন্দোলন, সভা-সমাবেশে উপস্থাপন করা হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে...।
তিনি বলেন, আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম যে, আজকের জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সেই সংকটের নিরসন হবে। জাতি সে আশায় অপেক্ষা করছিল। কিন্তু আমরা প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে যে বিষয়গুলো পেলাম, তিনি জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী, দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর যে সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছিল, তার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ, সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন-এর যে আদেশ সেটার ঘোষণা করেছেন, ইতোমধ্যে সেটার গেজেট প্রকাশ হয়েছে। গণভোট প্রসঙ্গে জনগণের অভিপ্রায় ও গণদাবি উপেক্ষা করে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের ঘোষণা তিনি দিয়েছেন। আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে খুবই স্পষ্ট করে জানাতে চাই, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ঘোষণার ভাষণে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি।
তিনি আরও বলেন, জনগণের যে অভিপ্রায় ছিল— জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে কী কী বিষয়ে সংস্কার হলো, নতুন প্রস্তাবিত 'জুলাই চার্টার'-এর ভিত্তিতে সংবিধানের কী কী সংশোধনী প্রস্তাব যাচ্ছে, যে ৪৮টি প্রস্তাবে আমরা সর্বসম্মত হয়েছি, সাংবিধানিক সংস্কারসহ অন্যান্য সংস্কার—এগুলো জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে জাতিকে জানাতে হবে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ভোটাররা জানবেন, তার ওপর মাইন্ডসেট হবে, তারপরে তার ওপর হ্যাঁ অথবা না মতামত দেবেন। কিন্তু একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হলে ভোটার তো সেই জুলাই চার্টার সম্পর্কে অবহিত হয়ে, তিনি হ্যাঁ বা না ভোট দেওয়ার পূর্বে তিনি তো সেটা আগে বুঝবেন, মাইন্ডসেট করবেন। অথচ একই দিনেই তাকে ওই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আবার একটা প্রতীকের জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিতে হবে। এটা একটা সংকট তৈরি করবে।
তিনি বলেন, আমাদের একই আন্দোলনের সাথী সহযোদ্ধা আরও ৮টি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে তার নিজ নিজ দলীয় ফোরামে তাদের এই ভাষণের ওপর প্রতিক্রিয়া, পর্যালোচনা নিজেরা করছেন। পরবর্তী সময়ে আমরা আট দল সম্মিলিতভাবে আমাদের করণীয় স্থির করব। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বিস্তারিত পর্যালোচনার পর এ ব্যাপারে আমাদের আরও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন।
তিনি আরও বলেন, আজকের ভাষণের মধ্যে যেমন- জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি হলো, গেজেট হলো, তেমনি গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন একইদিনে হলো, আবার গণভোটে যে ব্যালটে কী কী যাবে সেই বিষয়গুলো যাওয়ার কিছু বিষয় আজকে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন, সেটারও বিশ্লেষণ প্রয়োজন। এজন্য আমরা জামায়াতে ইসলামী নির্বাহী পরিষদ সন্ধ্যা ৬টায় এই ভাষণের ওপর মূল বিষয়ের গভীরে পর্যালোচনায় বসছি। সেখানে আমাদের লিগ্যাল এক্সপার্টরা থাকবেন। আশা করছি বিস্তারিত এই সব বিষয়ের খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করে এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া আপনাদের কাছে পরে জানাব।
পাশাপাশি ঘোষিত কর্মসূচি চলবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। জানান, ১৬ নভেম্বর আট দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠক হবে। সেই বৈঠক থেকে কর্মসূচি এবং এই ভাষণ সংক্রান্ত বিষয়ে আট দলের প্রতিক্রিয়া সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং আদেশের ওপর নভেম্বর মাসেই গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দফা গণদাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চলমান ও ঘোষিত আট দলীয় কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মুসা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাড. ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম।
আরও পড়ুন:








