বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যকে ঘিরে আবারো বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে করা সব মামলা তুলে নেয়ার বক্তব্যটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরপরই বিতর্ক শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে নিজ জেলা ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের শাপলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মত বিনিময়ে একথা বলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০২৪ সালের পাঁচ আগস্টের পর বলেছেন, প্রতিশোধ নয়, শান্তি, সমৃদ্ধি ও একটি উন্নত বাংলাদেশ চান। দেশনেত্রীর সেই কথাটাই আবার স্মরণ করে তিনি বলেন, প্রতিহিংসা-প্রতিশোধের রাজনীতি করতে চায় না বিএনপি। আওয়ামী লীগ যেভাবে নির্বিচারে মামলা করেছে, বিএনপি সে পথে হাঁটতে চায় না। বরং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যদি মামলা হয়েও থাকে সেগুলো তুলে নেয়া হবে।
এ ছাড়াও শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর যেসব কর্মীরা বিপাকে পড়েছে তাদের সহায়তা করার আশ্বাসও দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ এই নেতা।
মুহুর্তেই ফখরুলের বক্তব্যটি ছড়িয়ে পড়লে এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছে একদল শিক্ষার্থী। মামলা তুলে নেয়ার মন্তব্যটি তার ব্যক্তিগত মত, দলীয় সিদ্ধান্ত নাকি বক্তব্যের ভুল সেটি ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে। তার বক্তব্যের ভুল হলে, দ্রুত ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা।
এরইমধ্যে, গণমাধ্যমে প্রচার হওয়া ভিডিওটি ভুল দাবি করে মির্জা ফখরুল একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। সেখানে দেশের জনগণ ও দলের নেতাকর্মী উদ্দ্যেশ্যে প্রচার হওয়া বক্তব্যের বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আহ্বান করেছেন তিনি। দেশব্যাপী হয়রানিমূলক মামলা দায়ের কিংবা মামলা তুলে নেয়ার বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি বলে জানান বিজ্ঞপ্তিতে।
সাম্প্রতিক ঘটনা ছাড়াও পাঁচ আগস্টের পর থেকে নানা সময় বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকান্ডে বিতর্কি তৈরী করেছেন মির্জা ফখরুল। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী প্রসঙ্গে নমনীয়তা বজায় রাখলেও নিজ দলের নেতাকর্মীদের ওপর মাঝে মধ্যে মেজাজ হারাতে দেখা গেছে তাকে।
অভিযোগ আছে, বিরোধী মত দমন করতে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী হয়ে কাজ করতো বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। হাসিনা ও ভারতের ইন্ধনে জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করে ধর্মপ্রান মুসলমানদের জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে অত্যাচার করতেও কাজ করতো পত্রিকা দু’টি। যেকারণে পাঁচ আগস্টের পর পত্রিকা দুইটির প্রতি কঠোর অবস্থান নেয় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। সেসময়েও মীর্জা ফখরুল সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রথম আলো- ডেইলি স্টারকে রক্ষা করতে অতি উৎসাহী ভূমিকায় ছিলেন।
আওয়ামী আমলে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ শিরোনামে অপপ্রচার চালিয়েছিলো প্রথম আলো-ডেইলি স্টার। সেই পত্রিকা দুইটির পক্ষে কথা বলার কারণে সেসময়ও বিতর্কিত হয়েছিলো ফখরুল।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও অত্যাচার চালিয়েছে। দলের শীর্ষ নেত্রী খালেদা জিয়াকেও মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি চরম অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে গৃহবন্দি করা হয়। এমনকি তাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরেও যেতে দেয়া হয়নি। সে সময় অসুস্থতা নিয়েও বিদ্রুপ মন্তব্য করতে দ্বিধা করেননি ফ্যাসিস্টের দোসরেরা।
গত দেড় যুগ বিএনপিকে নানাভাবে অত্যাচার করেছে আওয়ামীলীগ। হাজার হাজার মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করা হয়েছিলো অসংখ্য নেতাকর্মীকে। বিএনপিসহ বিরোধী মত দমনে দানবের রূপ ধারণ করেছিলো আওয়ামী লীগ। সবশেষ ২৪ সালের ৫ আগস্ট এই ফ্যাসিস্টের ঐতিহাসিক পতন হয়েছে।
হাসিনার প্রতি ১৬ বছরের জমে থাকা ক্ষোভ উগরে দিতে থাকা বাংলার সাধারণ মানুষ। মুক্তির উল্লাসে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ। অনেক জায়গা থেকে ভেঙ্গে ফেলে শেখ মুজিবের মূর্তি। তখনও মুজিবের মূর্তি ভাঙ্গার প্রতিবাদ করে বিতর্কিত হয়েছিলো ফখরুল।
আওয়ামীলীগের প্রতি মায়াকান্না করা ফখরুলকে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে দেখা গেছে। জামায়াতে ইসলামী শরীয়াহ আইনের প্রস্তাব দিলে সরাসরি এর বিরোধিতা করেন ফখরুল। মাঝে মধ্যেই জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে দেখা গেছে তাকে।
এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্করের দাবি করা হলে দলটির বিরুদ্ধে কট্টর ভাষায় সমালোচনা করেন ফখরুল।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বিএনপির শীর্ষ নেতা হলেও ফখরুলের কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তিনি দেশে ফ্যাসিস্টের দোসরদের পূনর্বাসনে কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী আমলের অপরাধগুলোর বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
মির্জা ফখরুল দেশের অমঙ্গল ডেকে আনছেন বলেও অভিযোগ করেন সাধারণ মানুষ। বয়সের ভারে এমন পাগলামী করছেন কি না তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে।
স্বৈরাচার হাসিনা পতনে রাজপথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। তবে আওয়ামী পতনের পর থেকেই দলটির প্রতি মায়া কান্না দেখাচ্ছেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।
বিস্তারির ভিডিও লিংকে: https://www.youtube.com/watch?v=NU1Jnto3YSk&t=73s
আরও পড়ুন:








