ঢাকা-১৮ আসনকে ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে উত্তরা অঞ্চলে বাড়ছে অস্থিরতা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিতর্কিত নেতাকর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার অভিযোগে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন ক্রমেই সমালোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছেন।
স্থানীয় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, তার নেতৃত্বে উত্তরা, তুরাগ, বিমানবন্দর, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও খিলখেত অঞ্চলে বিএনপির সাংগঠনিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, এস এম জাহাঙ্গীরের সাম্প্রতিক বহিরাগত ও বস্তিবাসীদের নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। তার সঙ্গে যেসব ব্যক্তি প্রচার চালাচ্ছেন, তাদের প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে বিতর্কিত বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অঞ্চলের অধিকাংশ স্থায়ী নেতাকর্মী তার আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে।
কয়েকজন থানা পর্যায়ের নেতাদের অভিযোগ, এস এম জাহাঙ্গীর নির্বাচনের সময় স্থানীয় নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে বহিরাগতদের দায়িত্ব দেন। এমনকি নির্বাচনী পরিচালনার জন্য আর্থিক অনুদানও সংগ্রহ করেন, তবে সংগৃহীত অর্থ মাঠ পর্যায়ে ব্যয় না করে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি এক নেতা বলেন, আমরা কেউই প্রকাশ্যে তার সঙ্গে রাজনীতি করতে চাই না। এ অঞ্চলে চারজন জনপ্রিয় নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী, তারা একে অপরের প্রোগ্রামে অংশ নেন, কিন্তু এস এম জাহাঙ্গীরকে রাখেন না। তিনিও কাউকে আমন্ত্রণ করলে তারা যান না। কারণ তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে—তাই দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষায় দূরত্বই এখন নিরাপদ।
স্থানীয় নেতারা আরো করেন, এস এম জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন অপু শিকদার, দীপু শিকদার, বহিষ্কৃত যুবনেতা সাজ্জাদ আলী খান, উত্তরা পশ্চিম থানা যুবদলের বহিষ্কৃত সভাপতি মো. মিলন মিয়া, একই থানার বহিষ্কৃত সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আজমল হুদা মিঠু, তুরাগ থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন পারভেজ (আঙ্গু মামুন), ছাত্রদল নেতা জাকির, বহিষ্কৃত ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর, উত্তরখান থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাজী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বেপারী এবং বিমানবন্দর থানার যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়াসহ অনেকে।
এস এম জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত আজমল হুদা মিঠুর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠতা, রাজউকের মার্কেট ও ফ্ল্যাট দখল, চাঁদাবাজি ও মাদক সংশ্লিষ্টতায় একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। গত ৫ আগস্ট তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে বিএনপি তাকে বহিষ্কার করে।
দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা
বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের মতে, এধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড বিএনপির সাংগঠনিক ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে উত্তরা অঞ্চলে বিএনপির জনভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে।
এসব কর্মকান্ডে দলীয় উচ্চপর্যায়ে একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। স্থানীয় নেতাদের দাবি, এসব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা পুনর্বহাল এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:








