ঢাকা-২০ আসনের ধামরাইয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির নেতাকর্মীরা কোণঠাসা ছিলেন। এর পরও আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির সক্রিয় ভূমিকা ছিলো। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ধামরাইয়ে বিএনপি অন্তত চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর দলটি ‘হালে পানি’ পেলেও নিজেদের মধ্যে কোন্দল, দোষারোপ ও কাদা ছোড়াছুড়িতে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। দলীয় স্বার্থের চেয়ে গ্রুপের স্বার্থ এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে।
এক সময় সংসদীয় এ আসনটি ছিল বিএনপির ঘাঁটি। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সম্ভাব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি দল জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্বাধীনতার পর এ আসনে মুসলিম লীগ একবার, বিএনপি চারবার, জাতীয় পার্টি দুইবার এবং আওয়ামী লীগ তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। এ আসনটি বিএনপির ঘাটি হিসাবে বিবেচনা করছে বিএনপির হাই কমান্ড,ভোটের মাঠেও তৎপর দলের নেতা কর্মীরা, তারা ভাবছে হারানো ঘাঁটি পুনরুদ্ধারে এগিয়ে ধামরাই বিএনপি৷
তৃণমূলের অনেক বিএনপি নেতাকর্মীর অভিযোগ, পাঁচ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে যারা চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সাথে আতাত করে ব্যবসা-বাণিজ্য করে সুযোগ সুবিধা নিয়েছে, বর্তমানে টাকার প্রভাবে দখল ও চাঁদাবাজিতে সম্পৃক্ত তাদের কদর বেড়েছে। আর আন্দোলন-সংগ্রামে থাকা সাধারণ কর্মীরা উপেক্ষিত হচ্ছেন। ধামরাইযের কল-কারখানা, জমি খলবাজি ও চাঁদাবাজি নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেতারা যেমন জনগণের চোখে নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করছেন, তেমনি দলীয় ঐক্যও ভেঙে চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে।
এদিকে, ধামরাইয়ে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন। দলটি এখন জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে ভোট চাচ্ছে। সাম্প্রতিক ডাকসু, জাকসু, গকসু,চাকসু,রাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের ফলাফলকে অনুকূলে দেখে তারা আশাবাদী, এবার ধামরাইয়ে ‘নিরব বিপ্লব’ ঘটবে তাদের।
ধামরাই উপজেলাটি ১৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। ৩০৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটা এক লাখ ৮৫ হাজার ৮০ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৮২ হাজার ৩১৬ জন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, তরুণদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ এবং ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলেহর আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি।
তবে বিএনপির এই চারটি গ্রুপের মধ্যে তিক্ততা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সাধারণ নেতাকর্মীরা প্রায়ই বিব্রত হচ্ছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কিছু বিএনপি নেতা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ব্যক্তিস্বার্থে সুবিধা নিয়েছেন, যার প্রভাব এখনও বিদ্যমান।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ও উপজেলা সভাপতি তমিজ উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, মিথ্যা মামলায় আসামি হয়েছি, দুইবার কারাভোগ করেছি। ২০১৮ সালে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী ছিলাম। দল যদি আবার আমাকে মনোনয়ন দেয়, তবে তৃণমূলের সবাইকে নিয়ে ধামরাইয়ের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনবো।
ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি,সাবেক ছাত্রনেতা ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ বলেন, ত্যাগ, সততা ও জনপ্রিয়তা এই তিন শর্তে আমি নিজেকে প্রমাণ করেছি। রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলার আসামি হয়েছি, মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছি, বহুবার কারাভোগ করেছি। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।
মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি (সংরক্ষিত মহিলা আসন) সুলতানা আহমেদ বলেন, দেশের মানুষ এখন পরিবর্তনের অপেক্ষায়। যদি দল আমাকে ধামরাইয়ে মনোনয়ন দেয়, নির্বাচিত হয়ে এ উপজেলাকে দেশের মডেল উপজেলায় রূপান্তর করবো।
ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি বলেন, দলের ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমি তৃণমূল থেকে কাজ করছি। ২৪টি মামলার আসামি হয়েছি, তিনবার কারাভোগ করেছি। নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়ে দল মনোনয়ন দিলে আমি দলের মনোনয়ন পেতে আত্মবিশ্বাসী, নির্বাচনে জণগনের ভোটে ধামরাইয়ে ধানের শীষের বিজয় আসবে।
বিগত সময়ে ধামরাইয়ে জামায়াতে ইসলামী তেমন সক্রিয় না থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সভা-সমাবেশ ও জনসংযোগে ব্যস্ত রয়েছে দলটির নেতা-কর্মীরা আশা করছেন, ধামরাইয়ে বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মকান্ড ও অভ্যন্তরীণ বিভক্তির সুযোগে এবার ‘নিরব বিপ্লব’ ঘটাতে সক্ষম হবেন জামায়াত।
এ আসনে জামায়াতে ইসলামী থেকে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ঢাকা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর কাজী মাওলানা মো. আব্দুর রউফ তিনি বলেন, হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে দশটি মামলার আসামি হয়েছি, চারবার কারাভোগ করেছি। ২০১৪ সালে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রায় ৪৪ হাজার ভোট পেয়েছিলাম। ধামরাইয়ের জনগণ আমাদের সাথে পূর্বেও ছিলো এখনো রয়েছে৷ সচেতন জণগণ এখন পরিবর্তন চায়, তারা দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে ধামরাইয়ে তা প্রমাণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা৷
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির ধানের শীষ ও জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতীক ছাড়া ভোটের মাঠে তৎপর দেখা গেলেও নীরবে জাতীয় পার্টি,খেলাফত মজলিসের দেয়ালঘড়ি,গণঅধিকার পরিষদ ও অন্য কোন দলের নেতা কর্মীদের তেমন কোন তৎপরতা মাঠে দেখা যাচ্ছে না।
ধামরাইয়ের সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা, যেই নির্বাচিত হোন না কেন, তিনি যেন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করেন, স্বৈরাচারী মনোভাব পরিহার করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী হন।
আরও পড়ুন:








