অবিলম্বে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার এবং শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান, মর্যাদা ও স্বীকৃতি নিশ্চিতে যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে ’২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রবিবার (৫ অক্টোবর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রিফাত রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। এছাড়া বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সমাজ গঠনের প্রধান কারিগর শিক্ষকদের অবদানকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ এবং গভীর শ্রদ্ধা জানায় প্লাটফর্মটি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌথ ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ’২৪-এর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ফ্যাসিবাদ-মুক্ত নতুন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, সেই অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীদার ছিলেন আমাদের শিক্ষক সমাজও। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী বাহিনী যখন দেশব্যাপী ছাত্র-হত্যায় মেতে উঠেছিল, তখন কিছু শিক্ষক, বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ ছাড়া বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনের গুম-খুনের বিরুদ্ধেও তারা ছিলেন সোচ্চার। এই শিক্ষকরাই প্রমাণ করেছেন, শিক্ষকতা কেবল পাঠদানের পেশা নয়; এটি বিবেক, মানবতা ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিশ্বাস করে, তাদের এই সাহসী ভূমিকা আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।’
আওয়ামী শাসনামলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে গভীর সংকটে ঠেলে দেয়া হয়েছিল উল্লেখ করে বলা হয়, ‘বিগত দেড় দশকের শাসনামলে শিক্ষক নিয়োগে দলীয় প্রভাব, প্রশাসনিক কাজে পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম আমরা প্রত্যক্ষ করেছি; যা শিক্ষার পরিবেশকে যেমন কলুষিত করেছে, তেমনি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যকেও ব্যাহত করেছে। এর ভুক্তভোগী হয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ই।’
শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলা হয়, ‘আমরা অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে লক্ষ করছি, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে অভ্যুত্থানের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। ফলে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কর্তৃক বিভিন্ন ন্যায্য দাবিতে নানা আন্দোলন আমরা প্রত্যক্ষ করছি। অভ্যুত্থানোত্তর নতুন বাংলাদেশে এখনো শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠিত না হওয়া এবং এ ধরনের বিরাজমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অবিলম্বে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার এবং শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান, মর্যাদা ও স্বীকৃতি নিশ্চিতে যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করার আহ্বান জানাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, শিক্ষকদেরকে স্মরণ করা এবং তাদের সম্মান জানানোর জন্য ইউনেস্কোর উদ্যোগে ১৯৯৩ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ সভায় ৫ অক্টোবর দিনটিকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালন শুরু হয়। ইউনেস্কোর অনুমোদনে প্রতিবছর পৃথক প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
আরও পড়ুন:








