ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গদি ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয় ফ্যাসিস্ট হাসিনা। অভিযোগ রয়েছে, পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রী ও নেতাকর্মীদের দেশ থেকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। আর পালিয়ে বিদেশের মাটিতে বসে দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র করছে পলাতক নেতাকর্মীরা।
দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে পলাতক লীগের নেতাকর্মীরা। গত কয়েকদিনে দেখা গেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা মিছিল করে আওয়ামী লীগ ও এর নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। সম্প্রতি, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীদের মধ্যে ঘটে যাওয়া সহিংসতার সুযোগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর দেশিয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এতে আহত হয় শিক্ষকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী।
শুধু চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়। অভিযোগ রয়েছে, ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের ওপর ছদ্মবেশে হামলা চালায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়নাল আবেদিন হলরুমে শিক্ষকদের একটি আলোচনা সভা চলছিলো। এ সময় বিভিন্ন দাবি নিয়ে হলরুমে তালা দেয় শিক্ষার্থীরা। এঘটনায় শিক্ষকদের পক্ষ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দেশিয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়।
এদিকে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা পলাতক থাকলেও দেশকে অস্থিতিশীল করতে কাজ করছে সাধারণ কর্মীরা। রাজধানীর মোহাম্মাদপুর ও বনানীতে দেশবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলেও মোহাম্মাদপুর ও বনানীর মতো জায়গায় তাদের এসব ঝটিকা মিছিল দেখে হতাশা প্রকাশ করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ। তবে, এসব ঘটনায় ইতোমধ্যে সাবেক সংসদ সদস্যসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। আবার মিছিল করেই অনেকে কক্সবাজারে আত্মগোপনে গিয়েছে। এসব নেতাকর্মীদের ধরতে কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এর আগে, রাজধানীতে প্রকাশ্যে মুজিবের নামে দোয়া চেয়ে খাবার বিলি করেছে মডেল মিষ্টি সুভাষ।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান দাবি করে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে ‘র’ এর পরিকল্পনায় দিল্লিতে আওয়ামী লীগের অফিস খোলা হয়েছে। ‘র’ এর নির্দেশেই সেখান থেকে তারা দেশবিরোধী বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মঞ্চ ৭১ নামে একটি ব্যানারে গোলটেবিল বৈঠক করে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, সাংবাদিক পান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান। অভিযোগ উঠেছে, তারা সেখানে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্যে এই বৈঠক ডেকেছিলো। এ ঘটনায় উপস্থিত জনতা তাদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়।
এসব ছোট ছোট বিক্ষোভ মিছিল করে সরকারের শক্তি ও সক্রিয়তার বিষয়ে ধারণা নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সরকারের শক্তি ও সক্রিয়তার ঘাটতি পেলে এ মাসেই হয়তো মাঠে নামতে পারে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটি। সৃষ্টি করতে পারে বড় ধরণের সহিংসতা। প্রশ্ন উঠেছে, গোয়েন্দা তৎপরতা নিয়েও। অনেকেই বলছে, ২৪ এর পাঁচ আগস্টের পর বছর খানেক দলটির কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেশ সক্রিয় পলাতক লীগের নেতাকর্মীরা। রাজধানীতে প্রথম দিকে ছোট ছোট মিছিল বের করলেও সবশেষ মোহাম্মাদপুর, বনানী ও তেজগাঁও এলাকায় হাজার খানেক নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল করতে দেখা গেছে তাদের। এ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।
এর আগে, আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার অভিযোগে মেজর সাদেকুল হক সাদেক নামে এক সেনাকর্মকর্তাকে আটক করা হয়। ৩১ জুলাই বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘এ’-তে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান, সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা।
তিনি বলেন, মেজর সাদেক কক্সবাজারের রামু সেনানিবাসে ৩৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। গত ৫ মাস ধরে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। তার স্ত্রী পুলিশের এএসপি সুমাইয়া জাফরিন। তিনিও কয়েক মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। গত ৮ জুলাই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টার ভাড়া নিয়ে আওয়ামী লীগের ৪’শ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোডের একটি বাসা থেকে মেজর সাদেককে আটক করা হয়।
দেশকে অস্থিতিশীল করতে সব ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, এমন অভিযোগ করে সহিংসতা ঠেকাতে সরকারকে সব সময় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সচেতন নাগরিক সমাজ।
আরও পড়ুন:








