রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

অনলাইন কাঁপাচ্ছেন ছাত্রলীগের সুন্দরী নেত্রীরা

মোঃ আল আমিন

প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০৫

আপডেট: ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০৬

শেয়ার

অনলাইন কাঁপাচ্ছেন ছাত্রলীগের সুন্দরী নেত্রীরা
অনলাইন কাঁপাচ্ছেন ছাত্রলীগের সুন্দরী নেত্রীরা

আলোচিত, সমালোচিত এবং এক সময় দাপিয়ে বেড়ানো ছাত্রলীগের নেত্রীরা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন। পদ-পদবি, টেন্ডার বাণিজ্য, সুযোগ-সুবিধার জন্য এরা করেননি এমন কোনো কাজ নেই। ক্ষমতাধর আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে মিলে গড়ে তুলেছিলেন সম্পদের পাহাড়। নিজেরা যেমন আওয়ামী প্রভাবশালী নেতাদের মনোরঞ্জন করেছেন, তেমনি নানা সময় ইডেন কলেজের সুন্দরী শিক্ষার্থীদের দিয়ে একই কাজ করিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে বিস্তর।

তবে এখন তারা যেন রীতিমতো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন। দেশে আছেন না বিদেশে তারও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের খোঁজ মিলছে শুধু সাইবার জগতে। আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় প্রবলভাবে সক্রিয় তারা।

অথচ এক সময় এদের প্রভাবে , প্রতাবে, কার্যক্রমে পুরো দেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। বিশেষ করে ইডেন কলেজের ঘটনা পুরো জাতিকে স্তম্ভিত করে দেয়। ইডেনে মারামারি হানাহানাহানির ঘটনা চলছে বহু দিন থেকেই।

কিন্তু সংকট তৈরি হয় তখন, যখন ছাত্রলীগের্একটি অংশ থেকে অভিযোগ ওঠে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে সুন্দরী মেয়েদের তালিকা করে তাদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করতেন। রিভার বিরুদ্ধে অবশ্য অভিযোগ সীমাহীন। মেয়েদের মারধর করা, হল নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগও ছিল। একবার তার একটি অডিও রেকর্ডিং- ফাঁস হয়ে যায়। তিনি স্বীকারও করেন ওই হুমকি তিনি দিয়েছেন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আলোচিত এসব নেত্রী কার্যত আত্মগোপনে চলে গেছেন। অথচ এক সময় তারা ছিলেন ছাত্রলীগের অপরাজেয় সুন্দরী ভাবমুর্তির প্রতিচ্ছবি। এখন নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে, তারা সরকার বিরোধী সাইবার প্রপাগান্ডায় ব্যস্ত।

এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন। গত বছরে ২৭ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন ঢাবির শামসুন্নাহার হল শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি খাদিজা আক্তার উর্মি। একই দিনে আটক হনে রাজশাহী মহিলা কলেজের ছাত্রী ছাত্রলীগ নেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রকেয়া হল শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফির শাহরিন আরিয়ানা এবং ১৬ ডিসেম্বর আটক হন বহুল আলোচিত ইডেন কলেজ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা।

কিন্তু তিলোত্তমা শিকদার, আতিকা বিনতে হোসেন, রাজিয়া সুলতানা, নুজহাত ফারিয়া রোকসানা এমন বহুল আলোচিত নেত্রীর হদিস মিলছে না।

অভ্যূত্থানের আগে পরে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন, চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি এমনকি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ওপর গরম পানি নিক্ষেপের মতো ঘটনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

গণঅভ্যূত্থানে শেখ হাসিনার পতন তার ভারতের পালানোর পর এরা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপরই অনলাইনে নতুন করে সক্রিয় হতে শুরু করেন নেত্রীরা।

বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, আওয়ামী লীগ গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন স্তরের নেতাদের নিয়ে কয়েক লাখ সাইবার যোদ্ধা তৈরি করেছিল। তাদের মধ্যে ৪৫ হাজার কর্মীকে তথ্য প্রযুক্তিকে দক্ষ করে তোলা হয়। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ ইনফরমেশন বা সিআরআইয়ের সহযোগিতায়।

ফেসবুক মেটার প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ সংক্রান্ত ১৪৮টি ভুয়া অ্যাকাউন্ট পেইজ সরানো হয়েছে। এসব পেইজের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সিআরআইয়ের যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব অ্যাকাউন্ট থেকে বিএনপি, তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছিল এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচার চালানো হচ্ছিল। ফ্যাক্ট চেকার কদরুদ্দিন শিশির জানান, অন্তত ৯৮টি পেইজ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আবার নতুন করে খোলা পেইজ এবং ডলার খরচ করে বুস্ট করা অ্যাকাউন্ট থেকে আবার একই ধরনের অপতথ্য ছড়ানো হচেছ।

প্রশ্ন হচ্ছে, আত্মগোপনে থাকা এসব আলোচিত নেত্রী আসলে কোথায়? তারা কি দেশের ভেতরেই আছেন না সীমান্ত পেরিয়ে চলে গেছেন। তবে ডিজিটাল জগতে তাদের উপস্থিতি ধরা পড়ছে স্পষ্টভাবেই যে সুন্দরী ছাত্রলীগ নেত্রীরা এক সময় ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার করতেন তারাই এখন সাইবার যুদ্ধে নেমে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছেন।

এদের মধ্যে আতিদা বিনতে হোসাইন ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সভাপতি। তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার দাপটও ছিল কারণেই। এক সময় সাদ্দামের সঙ্গে আতিকার একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে বেশ ভাইরালও হয়। গণঅভ্যুত্থানের সময় মিনিটের মধ্যে ঢাকা ক্লিয়ার করার হুমকি দিয়ে আলোচিত হন তিনি। পরে ১৭ জুলাই তাকে সাধারণ ছাত্রীরা উত্তমমধ্যম দিয়ে হল থেকে বের করে দেন। এরপর আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

নুরজাহান ফারজানা রোকসানা ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। গণঅভ্যূত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর গরম পানি ফেলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পরে তাকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ২৪-এর আগস্ট গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে কান্নাকাটিও করেন তিনি। শেখ হাসিনা পালানোর পর থেকে তারও তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

জেসমিন শান্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের সাবেক সম্পাদক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ছিলেন। নিজ সংগঠনের কর্মীদের মারধর করে হাসপাতালে পাঠিয়ে আলোচনায় আসেন শান্তা। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকেই দলের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি।

বেনজির হোসেন নিশি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেসা মুজিব হলের ছাত্র লীগের সভাপতি তিনি। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্জের ঘনিষ্ঠ ছিলেন কারণে অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি। অভিযোগ আছে, লেখকের চাঁদা টেন্ডার বানিজ্যের চার ক্যাশিয়ারের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি। নিশি এখন আত্মগোপনে। তবে তার ভ্যারিফায়েড পেইজ থেকে এখনও সক্রিয় তিনি। দিয়ে যাচ্ছেন সরকার বিরোধী নানা পোস্ট।

ইডেন কলেজ ছাত্র লীগের সহসভাপতি রুনা আক্তার সুপ্তি। তিনি ব্ল্যাকমেইলিং-এর এক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন। ব্যাংকার, আওয়ামী লীগের মাঝারি পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে তাদের ব্ল্যাকমেইল করতেন। কোটি টাকা কামিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এখন নওগাঁয় নিজ বাড়িতেই আছেন তিনি।

আনিকা ফারিয়া জামান অর্ণা রাজশাহীর অপসারিত মেয়র খায়রুজ্জামানের মেয়ে। মেয়ের নিরাপত্তার সিটি কর্পোরেশনের ওয়াকিটকি নিয়ে গঠক করেছিলেন স্পেশাল ফোর্স। যার নাম ছিল এএসএফ আনিকা স্পেশাল ফোর্স। নানা বিতর্কের সঙ্গে অর্ণার নাম জড়িয়ে গেছে। দলীয় পরিচয়ে বাড়িয়েছেন চাকরিও। সেই চাকরিতে হাজির না হয়েই বেতন তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের পুরো সময়ই রাজশাহীর রাজনীতিতে আধিপত্য ছিল লিটন কন্যা অর্ণার। তার কারণেই ওই সময় ছাত্রলীগ পরিচিতি পায় আপু লীগ নামে। এমনকি ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন তিনি।

ভিডিও লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=5oPovs8-1VM



banner close
banner close