চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে স্থানীয় বাসিন্দারা উসকে দেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া। তার উসকানিমূলক বক্তব্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয় বাসিন্দারা।
আজ রবিবার সকাল সাড়ে এগারোটায় চবি শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। হামলার আগে গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন উদয় কুসুম বড়ুয়া। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়বাদী বৌদ্ধ ফোরামের আহ্বায়ক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সংলগ্ন জোবরা গ্রামের বড়ুয়া পাড়ার বাসিন্দা।
এর আগে, গত শনিবার রাতে এক নারী শিক্ষার্থীকে দুই নম্বর গেট সংলগ্ন এক বাশার দারোয়ান মারধর করলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ শুরু হয়। এই ঘটনার সমস্যা সমাধানে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিনিধি সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। সকাল সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইট সংলগ্ন এলাকায় উপস্থিত হয় সংশ্লিষ্টরা। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সমাধানের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এলাকাবাসীর সাথে কথা বলতে গেলে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়েন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা উদয় বড়ুয়া। তিনি উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু করেন। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে কটুক্তি করেন। উত্তেজিত হয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, “আমরা জানিনা কারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। কিন্তু রাতে আমাদের পাড়ায় শিক্ষার্থীরা ঢুকে ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেন কেন।”
তার এমন বক্তব্যের পরপরই উত্তেজিত হয়ে পড়েন উপস্থিত শিক্ষার্থীরা। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের উসকে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী। এর পরপরই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনাকে পুঁজি করে জোবরা এলাকায় বসবাসরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনাকে পুঁজি করে স্বার্থ হাসিলের পাঁয়তারা করে নিষিদ্ধ সংগঠন যুবলীগের নেতা হানিফ ও তার নেতাকর্মীরা। তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় ধারালো অস্ত্র, রাম দা, চাপাতি, ছুরি, বটি ও দা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা।
এসময় অন্তত তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের চবি মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) পাঠানো হয়েছে। গুরুতর আহত হওয়ায় চবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সহপাঠীরা। তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে স্থানীয় বাসিন্দাদের উস্কানিদাতা বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ফোরামের আহ্বায়ক সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়াকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এড্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ দলের নির্দেশনা অমান্য করে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য গঠনতন্ত্রের বিধান মোতাবেক তাকে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যামে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়া চবি শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাস বলে আখ্যা দিচ্ছেন। এছাড়া তিনি শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করতে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সব ধরনের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:








