রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

চুয়াডাঙ্গায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী; শক্ত অবস্থানে জামায়াত

রেজাউল করিম লিটন, চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট, ২০২৫ ১৩:২৯

আপডেট: ৩০ আগস্ট, ২০২৫ ১৬:৩৫

শেয়ার

চুয়াডাঙ্গায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী; শক্ত অবস্থানে জামায়াত
ছবি: বিএনপি ও জামায়াতের লোগো

অন্তর্বর্তী সরকার সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করায় সারা দেশের মতো ভোটের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমের জেলা চুয়াডাঙ্গাতেও।

বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী হিসেবে খ্যাত চুয়াডাঙ্গায় সংসদীয় আসন দুটি। এর একটি বিএনপি; অপরটি জামায়াত অধ্যুষিত। তবে ফ্যাসিস্টদের পতনের পর বিএনপির গ্রুপিংয়ে দুটি আসনেই শক্ত অবস্থান জামায়াতে ইসলামীর।

চুয়াডাঙ্গা-১

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনটি সদর উপজেলার ছয়টি এবং আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৫টিসহ মোট ২১টি ইউনিয়ন, দুটি পৌরসভা ও দুটি থানা নিয়ে গঠিত। ১৯৭৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কখনো এ আসন থেকে জিততে পারেনি। এই আসনটি বিএনপির ঘাঁটি। একসময় বলা হতো, এ আসনে ধানের শীষ প্রতীক মানেই নির্বাচনে জয়ের গ্যারান্টি।

তাদের সঙ্গে জামায়াতের জোট হওয়ায় বিএনপি হয়ে ওঠে অজেয়। ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত এ আসনে আওয়ামী লীগ কখনো জিততে না পারলেও, এরপর প্রহসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী হয়।

তবে বিএনপি নেতাকর্মীদের আশা, আগামী নির্বাচনে তারা ফিরিয়ে আনবেন তাদের হারানো আসনটি।

জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী দেশের ভোটের মাঠের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীরাই মাঠে সক্রিয়।

স্থানীয় ভোটারদের ধারণা, একসময়ের মিত্র এ দু'দলের মধ্যেই হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। বিএনপির শক্তি বিশাল কর্মীবাহিনী। তবে ৫ আগস্টের পর চুয়াডাঙ্গায় ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগে দলটিকে কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। সেইসাথে রয়েছে দলীয় কোন্দল। অন্যদিকে ভোটারদের কাছে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী নিয়ে আধিপত্য দেখাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী।

বিএনপির ভাবনা:

এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রনেতা, সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জামান দুদু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, জেলা বিএনপি নেতা লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামান ও প্রয়াত সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলামের মেয়ে মিলিমা ইসলাম বিশ্বাস মিলি।

এ আসনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিএনপি প্রার্থী শামসুজ্জামান দুদু। তবে ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন চারদলীয় জোটপ্রার্থী শহিদুল ইসলাম বিশ্বাস।

দুদু ১৯৯৬ সালের পর আর নমিনেশন পাননি। তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা কলেজ থেকে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেছিলাম। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি হয়েছিলাম। তারপর বিএনপির দলীয় কার্যক্রমের সঙ্গে জাতীয় রাজনীতি করছি। এসব কিছু চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষের অনুপ্রেরণার কারণে সম্ভব হয়েছে। তাই আগামী সংসদ নির্বাচনে নেতাকর্মীদের আগ্রহে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইব।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে যখন জাতীয়তাবাদী দল ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ছিল, তখনই আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইউনিট থেকে জেলা পর্যন্ত কমিটি গঠন করেছি। শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রেখে কমিটি করা হয়েছে। একটিও পকেট কমিটি হতে দিইনি। প্রত্যেকটি কমিটিতে আমরা ভোটের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করেছি। আমি সাধারণ সম্পাদকও হয়েছি নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তিনি বলেন, আমি মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হতে পারলে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি আলমডাঙ্গায় একটি বড় হাসপাতাল করতে চাই।

কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জিয়া পরিষদের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মিলিমা ইসলাম মিলি বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে চুয়াডাঙ্গার মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, মাদক নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি বন্ধ এবং একটি কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠা করবেন।

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে বেঁচে যাওয়া সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট .কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামানের দাবি, ২০১০ সাল থেকে এ আসনে মাঠে কাজ করছেন। তার দৃঢ় বিশ্বাস, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অবশ্যই এ আসন তিনি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। চুয়াডাঙ্গার বর্তমান পরিস্থিতিতে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, আমি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হলে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনকে একটি মডেল রাজনৈতিক ও উন্নয়নমুখী এলাকা হিসেবে গড়ে তুলব।

জামায়াতের ভাবনা:

অন্যদিকে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি, চুয়াডাঙ্গা জামায়াতের জেলা সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল বলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হওয়ার রেকর্ড আছে জামায়াতের। আমি বিশ্বাস করি, সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে এ আসনের ভোটাররা দাঁড়িপাল্লাকে বেছে নেবেন। তিনি জানান, জুলাই বিপ্লবের পর চুয়াডাঙ্গার গণমানুষের কাছে জামায়াতের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। তিনি এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বড় ভূমিকা রাখবেন বলে জানান।

নতুন দল এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মোল্লা ফারুক এহসান, খেলাফত মজলিসের মাওলানা সফিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা জহুরুল ইসলাম আজিজি, গনঅধিকার পরিষদের এ্যাড. হাবিবুর রহমান দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

চুয়াডাঙ্গা নির্বাচন অফিসের ২০২৩ সালের সর্বশেষ ভোটার তালিকা অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা ১ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৩৮৯ জন। নারী ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ৫৮৭ জন, হিজড়া ভোটার ৪ জন।

চুয়াডাঙ্গা-২

সদর উপজেলার ৪টি, দামুড়হুদা উপজেলার ৮টি এবং জীবননগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন, দুটি পৌরসভা ও তিনটি থানা নিয়ে গঠিত এ আসনটি গঠিত।

চুয়াডাঙ্গা ২ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪০৩ জন। নারী ভোটার ২ লাখ ৩১ হাজার ৬৯১ জন। হিজড়া ( তৃতীয় লিঙ্গ) ভোটার ৪ জন।

এখানকার বেশিরভাগ ভোটার কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ও রেলবন্দরসহ অন্য শ্রমিকের সংখ্যাও এখানে কম নয়। এ আসন থেকে ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, ১৯৯৬ সালে বিএনপি ও ২০০১ সালে চারদলীয় জোটপ্রার্থী বিজয়ী হন।

বিএনপির ভাবনা:

এ আসনে বিএনপির প্রার্থী বিজিএমইএ সভাপতি ও জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু এ আসনের প্রার্থী হতে পারেন।

দামুড়হুদা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হাসান তনু বলেন, মাহমুদ হাসান খান বাবু ভাই এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এ আসনের ব্যাপক উন্নতি হবে।

জামায়াতের ভাবনা:

জামায়াতের নেতারা বলেন, এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও জেলা আমির রুহুল আমিন। এ আসনটি জামায়াত অধ্যুষিত। আওয়ামী লীগের বাধা উপেক্ষা করেই ২০১০ সাল থেকে তিনি এ আসনে কাজ করছেন। জেল-জুলুম, হামলা-মামলা মাথায় নিয়েই এলাকায় অবস্থান করে মাঠ গুছিয়েছেন। এ আসনে জামায়াত প্রার্থীকে হারানো কঠিন হবে। ইসলামপন্থীদের জোট হলে এ আসন আরো সুসংহত হবে জামায়াতের।

রুহুল আমিন বলেন, চুয়াডাঙ্গা-২ পিছিয়ে পড়া অঞ্চল। এখানে ভালো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। বিগত সরকারের আমলে জীবননগর মহিলা কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে। তবে এর চেয়ে জীবননগর ডিগ্রি কলেজ অনেক পুরাতন এবং এর শিক্ষার্থী অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও এই কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়নি; এতে বৈষম্য করা হয়েছে। এই বৈষম্য দর্শনা, দামুড়হুদা ও জীবননগরে আছে। তিনি বলেন, এই বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। দর্শনায় একটি হাসপাতাল নির্মান করবো। বড় সব নির্বাচনে এই আসনে জামায়াতকে ফ্যাক্টর হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।

ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি হাসানুজ্জামান সজিব, খেলাফত মজলিসের খন্দকার মাওলানা ফারুক হোসেনও এ আসনে প্রার্থী হবেন বলে তাদের দলীয় সূত্রে জানা গেছে।



banner close
banner close