দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অভ্যন্তরীণ সংঘাত সৃষ্টির অভিযোগে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা বিএনপি ও যুবদলের শীর্ষ পাঁচ নেতাকে সম্প্রতি প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে তাদের অনুসারীরা নানা সভা-সমাবেশ করে আসছিলেন।
কিন্তু মঙ্গলবার (৫ জুলাই) উপজেলা বিএনপির একাংশ প্রকাশ্যে দলীয় ওই বহিষ্কৃত নেতাদের অতিথি করে যুব সমাবেশের আয়োজন করে। মঞ্চে তাদের উপস্থিতি নিয়ে উপজেলা বিএনপির ভেতরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে একে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ও দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।
সেদিন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় ৩ কিলোমিটার র্যালি করে দলটি। মিরসরাই থানা, জোরারগঞ্জ থানা, মিরসরাই পৌরসভা ও বারইয়ারহাট পৌরসভা যুবদলের উদ্যোগে বড়তাকিয়া বাজার থেকে শুরু হয়ে র্যালি উপজেলা সদরে এসে শেষ হয়। পরবর্তীতে যুবদলের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত যুব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবদল নেতা মোজাম্মেল হোসেন রানা এবং সঞ্চালনা করেন এস এম সুমন।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বহিষ্কৃত সাবেক মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন। এ সময় বহিষ্কৃত উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন, বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি দিদারুল আলম মিয়াজী, উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন এবং জোরারগঞ্জ থানা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্তরের শত শত নেতা-কর্মী অংশ নেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বহিষ্কৃত নেতাদের প্রকাশ্যে মঞ্চে বসানো কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্যের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। এটি শুধু দলীয় শৃঙ্খলাকে প্রশ্নবিদ্ধই করেনি, বরং কেন্দ্র ও তৃণমূলের মধ্যে বিভাজন আরও গভীর করতে পারে।
এর আগে গত ২৯ জুলাই, মঙ্গলবার, দলটির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলের ভেতরে সংঘাত ও হানাহানি সৃষ্টি করে দলীয় শৃঙ্খলা চরমভাবে লঙ্ঘন করায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন, বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দিদারুল ইসলাম মিয়াজী, যুবদল নেতা সিরাজুল ইসলাম ও কামাল উদ্দিনকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আউয়াল বলেন, “আমি দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় যুব সমাবেশের বিষয়ে আমার জানা নেই। যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে (বহিষ্কৃতদের নিয়ে সমাবেশ) তাহলে হাইকমান্ডকে অবশ্যই জানানো হবে।”
উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন বলেন, “দলীয়ভাবে বহিষ্কার করলে ওসব নেতাদের নিয়ে যুব সমাবেশ করা যায় না। তাদের সঙ্গে কোনো নেতাকর্মীর সম্পর্ক-যোগাযোগ রাখা যাবে না—এটা নির্দেশনা আছে। বহিষ্কৃতদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করলে হাইকমান্ডকে রিপোর্টিং করার সুযোগ আছে।”
যুব সমাবেশে অংশ নেওয়া মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, “আমরা জুলাই-আগস্টের প্রোগ্রাম করেছি। আমরা তাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছি। বহিষ্কৃত হলেও ওনার পদ-পদবি নেই, তবে বিএনপি তো করতেই পারে, বিএনপি করতে নিষেধ আছে নে? এটি জুলাই-আগস্টের বিজয় উপলক্ষে র্যালি ও সমাবেশ ছিলো।” তবে তিনি দলীয় ব্যানারের প্রোগ্রাম ছিলো না বলে দাবি করলেও একাধিক তথ্যে দেখা গেছে, মিরসরাই থানা, জোরারগঞ্জ থানা, মিরসরাই পৌরসভা ও বারইয়ারহাট পৌরসভা যুবদলের উদ্যোগেই সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরও পড়ুন:








