দলীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতাকর্মী গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়েছে। যাদের প্রধান উদ্দেশ্য- দেশের ভেতর বড় ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট হাসিনার সবুজ সংকেত পাওয়ার পর তারা ঢাকা দখলের পরিকল্পনা করেছিলো বলে জানা যায়। যে কারণে তালিকা করে হাজার হাজার নেতাকর্মী দেশ-বিদেশে নিচ্ছে প্রশিক্ষণ। দলটির একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষ করে। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া কয়েকজন সদস্যের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে বিষয়টি জানাজানি হলেও এবিষয়ে গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয় অবসরে যাওয়া হাসিনা-পন্থী সাবেক সেনা সদস্যরা। এই তালিকায় নাম থাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে নেয়া হয়েছে মেজর সাদিকুল হক সাদিককে। তবে তার ব্যবহৃত মোবাইল ও ল্যাপটপ জব্দ করা যায়নি। দেশের বাইরে গেরিলা প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে ভারতের দিল্লি ও কলকাতায়। পতিত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে আওয়ামী-ঘেষা পলাতক পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে জানিয়েছে, জাতীয় দৈনিক আমার দেশ।
রাজধানী ঢাকা ও গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও চলছে প্রশিক্ষণ। চাকরিরত ও আওয়ামী-পন্থী সাবেক সেনা কর্মকর্তারা গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিবুর রহমানসহ পলাতক অনেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে জানা যায়।
গত ৮ জুলাই রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এই প্রশিক্ষণের তথ্য পেয়ে ১৩ জুলাই রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকায় অভিযান চালায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন ইউনিট। অভিযানে গ্রেফতার হয়, বরগুনার যুবলীগ নেতা সোহেল রানা ও গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেত্রী শামীমা নাসরিন শম্পা। তারা গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে যেসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে তা যাচাই করা হচ্ছে বলেও সূত্রটি জানিয়েছে। প্রশিক্ষণ নেয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১৬ জনকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ঢাকা দখল করাই ছিল তাদের প্রধান টার্গেট। এজন্য ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশের অপেক্ষায় ছিল তারা। পরিকল্পনা মোতাবেক তার নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশ থেকে তালিকাভুক্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী একযোগে রাজধানীর শাহবাগে জড়ো হবে। শাহবাগ মোড় দখল করে জনমনে আতঙ্ক তৈরিসহ জনগণকে জানান দেয়া হবে আওয়ামী লীগের কয়েক লাখ লোক ঢাকা দখলে নিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রভাব পড়বে সারা দেশে। আর এতে আওয়ামী অধ্যুষিত কয়েকটি জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাঠে নামার সাহস দেখাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গুলশান বিভাগের উপকমিশনার কামরুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি একটি অনেক বড় কর্মযজ্ঞ। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে তিনি জানান, ‘এ ঘটনায় শুধু ডিবি নয়, আরও কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে।’
বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে কোনো নাশকতার শঙ্কা নেই। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের হুমকিও নেই। সবকিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দেশের নিরাপত্তা বজায় রাখার লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ অভিযানের উদ্যোগ।’
পুলিশের বিশেষ শাখার ইস্যু করা চিঠিতে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ১১ দিনের বিশেষ অভিযান প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি পুরো বাংলাদেশের অভিযান নয়, ডিএমপি তাদের মতো করে অভিযান চালাচ্ছে।’
আরও পড়ুন:








