সোমবার

১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

শেরপুরে এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে উত্তেজনা, নাশকতার আশঙ্কায় তৎপর প্রশাসন

শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৬ জুলাই, ২০২৫ ১৬:২০

শেয়ার

শেরপুরে এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে উত্তেজনা, নাশকতার আশঙ্কায় তৎপর প্রশাসন
ছবি সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঘোষিত জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচিকে ঘিরে শেরপুরে বিরাজ করছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। শনিবার (২৭ জুলাই) অনুষ্ঠেয় এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে একটি রাজনৈতিক পক্ষ নাশকতার পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্ভাব্য সহিংসতা এড়াতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ কর্মসূচিটি প্রতিহত করতে সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছে। জেলার অন্তত সাতটি এলাকায় অনুষ্ঠিত গোপন বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়েছে—যার মধ্যে চরশেরপুর, বামনেরচর, নবীনগর, পানাত্তা পাড়া, থানাঘাট, ভাতশালা ও খড়িয়া কাজির চর উল্লেখযোগ্য।

চরশেরপুর এলাকায় গত ১৬ জুলাই এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বামনেরচর থেকে চারটি ইজিবাইকে করে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট দৈর্ঘ্যের লাঠি আনা হয় মীরগঞ্জ মহল্লায়। এতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অন্তত ৩০ জন কর্মী অংশ নেয়। স্থানীয় এক শিল্পপতি ও যুবলীগ নেতা এ পরিকল্পনায় আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার মালিকানাধীন একটি ব্রিকস ফিল্ডেও মিটিং হয়েছে। তদারক করছেন সদ্য কারামুক্ত স্থানীয় নেতা মুকুল দফাদার।

এছাড়া সদর উপজেলার নবীনগর ড্রাইভারপট্টি, পানাত্তা পাড়া, পুরাতন থানাঘাট ও ভাতশালা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এলাকাতেও নাশকতার উদ্দেশ্যে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বৈঠকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল।

শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজির চর ইউনিয়নে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও হত্যা মামলার আসামি দুলাল মিয়ার নেতৃত্বে মিটিং হয়েছে। এ বৈঠকে শেরপুর পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতারা অংশ নেন। সূত্র বলছে, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মুক্তা প্রিন্সিপাল এবং সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির রুমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মুক্তা প্রিন্সিপাল এ উদ্যোগে অর্থায়ন ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

রাণীশিমুল ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ সোহাগের নেতৃত্বেও একটি দল শ্রীবরদী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বৈঠকে অংশ নিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, শ্রীবরদীর সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিরাও এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেরপুর জেলা মিডিয়া সেলের প্রধান জসিম উদ্দিন বলেন, “এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা আসছেন—এ খবরে সাধারণ জনগণের মাঝে আশা ও আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।”

জেলা আহ্বায়ক মো. মামুনুর রহমান বলেন, “পূর্বে যারা আন্দোলনে গুলি চালিয়েছিল, তারাই এখন নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। প্রশাসনের উচিত এসব ষড়যন্ত্রকারীকে আইনের আওতায় আনা।”

এনসিপির জেলা আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার লিখন মিয়া বলেন, “নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগসহ একাংশ পরিকল্পিতভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ব্যাহত করতে চাইছে। আমরা আগেই প্রস্তুত। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল ভূমিকা কামনা করছি।”

শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “জেলার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ কেউ অশান্ত করার চেষ্টা করলে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এনসিপির কর্মসূচির বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। নাগরিকদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।”



banner close
banner close