রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে কোচিং বাধ্যতামূলক করায় কর্তৃপক্ষকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
শুক্রবার সকালে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান আনিকার পরিবারকে সহমর্মিতা জানানোর পর অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই দাবি জানান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে উত্তরার দিয়াবাড়ী গোলচক্করের রূপা মিয়া আবাসিক এলাকায় নিহত আনিকার বাসায় যান গয়েশ্বর
নিহত নুসরাত জাহান আনিকার বাবা আবুল হোসেনকে পাশে রেখে সাংবাদিকদের গয়েশ্বর বলেন, মাইলস্টোন একটা ভালো মানের স্কুল নাকি। তাহলে সেখানে কেন কোচিং বাধ্যতামূলক। আনিকার বাবার মুখ থেকে শুনেছি, কোচিংয়ের জন্য যারা অপেক্ষা করছিল, তারাই মারা গেছেন। স্কুলের মাসিক বেতন ১৭০০ টাকা; তাহলে কোচিং কেন সাড়ে ৩ হাজার টাকা। একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চলে, অর্থ উপার্জনই যদি একমাত্র লক্ষ্য হয়, তাহলে এই স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিচারের আওতায় আনা উচিত।
তিনি বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা এর আগে আমাদের দেশে দেখিনি। এ রকম জনবহুল এলাকায় বিমান প্রশিক্ষণও হয় না। শোনা যায় বিমানটি পুরোনো, উড্ডয়নের উপযোগী নয়। বিমানের মূল্য কত এটা বিষয় নয়; এত অল্প বয়সে যে একজন পাইলটকে দেশ হারালো।
তিনি আরও বলেন, জীবন গেছে অনেক, তার সংখ্যাটা এখনো নিশ্চিত নয়, প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে। অনেকের লাশও মা-বাবা দেখেননি। কারও ব্যাগ, ড্রেস, জুতা দেখে দেখে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। সন্তানকে এভাবে বিদায় দেওয়া অনেক কঠিন। সাধারণত সন্তানরা বাবা-মাকে বিদায় দেয়, কিন্তু বাবা-মা সন্তানকে বিদায় দেয়- এটা কাম্য নয়।
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর রায় বলেন, বিমানবাহিনীকেও জিজ্ঞাসা করতে হবে- তারা কেন এই জনবহুল এলাকা প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নিয়েছে। দেশে তো অনেক জায়গা আছে। বিমানের ফিটনেস ছিল কিনা, অন্যত্র বিমান প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে কিনা, নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের জন্য কী করবে- এই নিয়ে বিমানবাহিনীর বক্তব্য দেওয়া উচিত। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষও এর দায় এড়াতে পারে না।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আজ যদি বিএনপি বা নির্বাচিত কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকত, তাহলে শোকের পাশাপাাশি মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ত। এ কারণে মানুষ শোকাহত হলেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেনি। আমরা মনে করি, এর একটি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যেন ভবিষ্যতে এভাবে আমাদের সন্তানদের মা-বাবার বুক খালি করে চলে যেতে না হয়।
বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় বিভিন্ন দেশ থেকে চিকিৎসক আসার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, চীন, ভারত ও সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক দল বাংলাদেশে আসা ইতিবাচক, তাদের স্বাগত জানাই। সহানুভূতি নিয়ে তারা আমাদের এখানে এসেছে। এই ঘটনায় সারা বিশ্বের মানুষ আজ শোকাহত।
সরকার প্রকৃত পক্ষে সরকার চালাচ্ছে না উল্লেখ করে গয়েশ্বর রায় বলেন, সরকারের মাঝে সমন্বয়হীনতা আছে। অভিজ্ঞতারও ঘাটতি আছে। একটা নির্বাচিত সরকারের দায়বদ্ধতা থাকে। কিন্তু অনির্বাচিত সরকারের সেভাবে দায়বদ্ধতা থাকে না। এই সরকার তো কোনো দলের না, সে কারণে সরকারের দুর্বলতা নিয়ে আমরা মন্তব্য করি না।
তিনি বলেন, সরকার বিপদে পড়লে রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকে। তবে সরকার দৃশ্যমান চলছে- এটা কেউ কিন্তু বলছে না। যারা সরকারে আছেন তারাও যে ঠিকমতো অফিস করেন, তাও মনে হয় না। ১৭ বছর ধরে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা এখনো চলমান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশিও। ফলে নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানা ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়বে এবং দেশে নানা সংকট সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন গয়েশ্বর।
আরও পড়ুন:








