টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক মিয়ার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক জমি দখল, হামলা ও ভয়ভীতি, মানহানিসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এইসব করেছে যাচ্ছে।
অভিযুক্ত মানিক মিয়া উপজেলার বরকতপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে।
স্থানীয় খামার ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া অভিযোগ করেন, মানিক মিয়া তার বাড়িতে এসে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক দেড় লাখ টাকা নিয়ে যান। সোহেলের দাবি, চাঁদার টাকা না দিলে ব্যবসা চালিয়ে যেতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেন মানিক। পরবর্তী সময়ে তার দলবল নিয়ে এসে বাড়িতে হামলা চালান, যা দেখে সুমনের বাবা মৃত চান মামুদ মানসিক চাপে মারা যান বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, তার জমির পাশে তিনি একটি পুকুর খনন করতেছে এমন খারা ভাবে ফলে তার জমিসহ আশেপাশের ফসলিজমি হুমকি মুখে। যার ফলে আবারো ১ লাখ টাকা চাওয়া হয় এতে করে মানিক কিছুটা জমি রেখে দিবে যাতে তার জমি বৃষ্টি বা অন্যভাবে ক্ষতি না হয়।
সোহেলের মা বলেন, মানিক আমার বাড়ীতে এসে হামলা করেছে আমার ছেলের কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছে। বাড়ীতে এসে হামলা করার ফলে আমার স্বামী তা দেখে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার কয়েকদিন পর আমার স্বামী মারা যান।
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী বলেন, মানিক মিয়া তার ৪ শতাংশ জমির মধ্যে আড়াই হাত অংশ জোরপূর্বক দখল করে সেখানে মাটি ফেলে রাস্তা তৈরি করেছে। আমাকে জানানো হয়নি। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেই দলের প্রভাব দেখাবে তাই কোন প্রতিবাদ করিনি।
আরেক ভুক্তভোগী বলেন, সালিশি বৈঠকের নাম করে মানিক প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে মামলা মীমাংসার আশ্বাস দেন, তবে পরবর্তীতে আর কোনো খোঁজ নেননি।
অন্য আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমার ২৫ হাজার পাওয়না টাকা দেয় না। সে আরো বলেন, এরকম অনেক আছে।
এছাড়াও জানা যায়, গত বছর ৭ মার্চ উপজেলার চর অলোয়া গ্রামের করিম ওরফে কলি উদ্দিনের মেয়ে কল্পনার বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন মানিক মিয়া। মানিক দাবি করেন, কনের সঙ্গে তার দুই বছরের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। তবে কনে তা অস্বীকার করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে মানিক মিয়া আহত হন। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা এলাকায় ব্যাপক আলোচনা তৈরি করে। কনের পরিবার পরবর্তীতে মানিকের ভয়ভীতি এড়াতে ঢাকায় গিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা মানসম্মানের ভয়ে কোন মন্তব্য কথা বলতে রাজি হয়নি।
শুধু তাই নয় স্থানীয়রা বলছেন, মানিক সরকারি বিভিন্ন রিলিফের কার্ড বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে বিক্রি করেন। এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে মানিক মিয়া কখনো ৫'শ, কখনো ৫ হাজার টাকা ধার নিয়ে ফেরত না দেওয়াই তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
কল্পনার সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিলো জানিয়ে তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বিকার করেছে অভিযুক্ত মানিক মিয়া। তিনি বলেন, আমাকে রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতি করার জন্য আমার বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অলোয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম হাসান বলেন, মানিক মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত কেউ সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ দেয়নি। তবে কেউ অভিযোগ করলে তা প্রমাণিত হলে প্রশাসন মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওসমান গুণী বলেন, থানা বিএনপিকে বিষয়টা অবগাত করা হয়ছে।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান তালুকদার সেলু বলেন, ব্যক্তির দায় সংগঠন নেবে না। মানিক মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্তপূর্বক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রাহণ করা হবে।
আরও পড়ুন:








