বুধবার

১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২ পৌষ, ১৪৩২

খালি নির্বাচন নির্বাচন করেন, খুনি চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২ জুলাই, ২০২৫ ১৭:০১

শেয়ার

খালি নির্বাচন নির্বাচন করেন, খুনি চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না কেন?
ছবি সংগৃহীত

বিএনপিকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন তুলে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, আপনাদের তো শুধু নির্বাচন চাইতেই দেখি কিন্তু চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না কেন? নির্বাচন চান অথচ মিটফোর্ডের খুনিদের নিয়ে কথা বলেন না কেন? আপনারা কি এখনো দলীয় সন্ত্রাসীদের চিন্তা-চেতনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেন নাই?

তিনি বলেন, মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সারা দেশের মানুষকে অবাক করেছে। সোহাগের অপরাধ কি ছিল? শুনছি তিনি নাকি যুবদলেরই লোক ছিলেন। যে দলেরই হোক, মানুষ তো। তার অপরাধ, তার কাছে চাঁদা চেয়েছে, দেয়নি। এটা কোনো অপরাধ?

মিটফোর্ডে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডসহ সারা দেশে খুন-ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে শনিবার বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিলোত্তর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।

রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশের সব শ্রেণিপেশার হাজার হাজার মানুষের জীবন, লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে বিদায় করেছিল। বাধ্য হয়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। মানুষ নিশ্চিন্ত হয়েছিল, আশ্বস্ত হয়েছিল সন্ত্রাসীদের কাছে আর জীবন দিতে হবে না, চাঁদা দিতে হবে না আর মা-বোনদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের অবর্তমানে একটি দল বাংলাদেশের মালিক বনে গেছেন।

তিনি বলেন, আমরা তো একসঙ্গে আন্দোলন করেছি। আমরা তো এভাবে আগে কখনো নামিনি। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, বুয়েটসহ সারা বাংলাদেশে যে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠেছিল আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, তেমনি সারা দেশে গতরাতেও প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠেছে দুর্নীতি, চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। এই বিক্ষোভ তো হওয়ার কথা ছিল না। হাসিনা তো পালিয়ে গেছে। তাহলে চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস কারা করছে? দেশের নাগরিকদের সজাগ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, সোহাগকে যখন হত্যা করা হয়, তখন বহু লোক আশপাশে ছিলেন, চাঁদাবাজ ছিলেন মাত্র কয়েকজন। জনগণ পায়ের জুতো খুলে মারলেই তো চাঁদাবাজরা মাটির সঙ্গে মিশে যেত। জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে, তাহলে এই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজরা আজকে সোহাগকে মেরেছে কাল আপনাকে আমাকে মারবে, পরে যাকে ইচ্ছে তাকে মারবে। আমরা এই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের হাতে বাংলাদেশের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারি না।

রফিকুল ইসলাম খান বলেন, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের কোনো পরিচয় নেই, তাদের হাতে জামায়াত আর জনগণকে জিম্মি হতে দেবে না।

তিনি বলেন, কারা কারা চাঁদাবাজদের গডফাদার তা দেশের মানুষ জানে। কাজেই চাঁদাবাজদের, খুনিদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। খুনি-চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে দলমত ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের এ নেতা বলেন, আপনারা কিন্তু ক্ষমতায় বসেন নাই। ১৮ কোটি বাংলাদেশি আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে, তামাশা করার জন্য না, আরাম-আয়েশে চেহারা বড় করার জন্য জনগণ আপনাদের ক্ষমতায় বসায় নাই। আপনারা চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করতে পারেন না কেন? ভয় পান? থানা থেকে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়, আপনাদের কাজটা কি? এসব হত্যাকাণ্ড, থানা থেকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বহু আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করা উচিত ছিল।

রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করেন তাতে সমস্যা নাই কিন্তু দায়িত্বটা তো ঠিকঠাক পালন করেন। চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনিরা কত লম্বা, খাটো না ছোট তা দেখার সময় আপনাদের থাকা উচিত নয়, মানুষেরও সে সময় নেই। আপনারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন, গতরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে, নগরে বন্দরে মানুষ কিন্তু ফুঁসে উঠেছে। এই ফুঁসে ওঠা আগুন যদি জ্বলে উঠে তাহলে কোনো সন্ত্রাসী রেহাই পাবে না। সুতরাং খুনি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ যেই হোক গ্রেপ্তার করেন। কোন দলের লোক, কত শক্তিশালী গ্রুপের লোক তা যদি বিবেচনা করেন তাহলে ক্ষমতা ছেড়ে দেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, লগি-বৈঠার তাণ্ডবের সময় মানুষকে হত্যার পর নৃত্য করতে দেখেছিলাম। ১৭ বছর পরে আবারও মিটফোর্ডের সামনে তার চাইতেও ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে পেলাম। মানুষের গায়ের লোম শিউরে ওঠে। বর্তমান সভ্যতার যুগে মৃত্যুর পরও পাথর নিক্ষেপ করতে পারে। তাদের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ধর্ষণের ইতিহাস আমরা এক বছর ধরে দেখতে পাচ্ছি।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা যে স্লোগান দিয়েছিল, বৈষম্য, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, সন্ত্রাস থাকবে না। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটি দল ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই এসব কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। আমরা বলতে চাই, চাঁদাবাজদের আস্তানা, ঢাকাসহ সারা দেশে থাকবে না। ছাত্রজনতা ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।



banner close
banner close