রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রকাশ্যে পাথর মেরে ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার সঙ্গে যুবদলের নেতাকর্মীরা জড়িত। ৯ জুলাই সন্ধ্যায় ঘটলেও ১১ জুলাই হত্যার ভিডিও ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। নৃশংস এ ঘটনার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ।
ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সংগঠন থেকে পদত্যাগ করছেন। সংগঠনের প্রতি হতাশা ও নৈতিক অবস্থান থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছেন তারা। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৮ জন নেতাকর্মীর পদত্যাগের খবর পাওয়া গেছে।
আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এইউএসটি) শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শুক্রবার (১১ জুলাই) নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আবেগঘন একটি পোস্টে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি লেখেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে’ তিনি পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি আরও লেখেন, “যেদিন প্রকৃতি স্বচ্ছ বাংলাদেশ বিনির্মাণের ডাক দেবে, সেদিন আপনাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমি থাকব মিছিলের অগ্রভাগে, প্রথম বুলেটের শিকার হতে। তবুও এ দেশের মাটির ঊর্ধ্বে আমার কাছে কিছুই মূল্যবান নয়। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”
একই দিনে আরও যাঁরা পদত্যাগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য পারভেজ রানা প্রান্ত
মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদলের সদস্য মুহাম্মাদ রাব্বি মিয়া
গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জাহিমুর রহমান জিসান ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইশতিয়াক রহমান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হল শাখার কর্মী মোহাম্মদ আবু সাইদ
সিলেটের চুনারুঘাট উপজেলার রানীগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম ইমরুল
প্রসঙ্গত, ৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড হাসপাতাল) সংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে মো. সোহাগ (৪৩) নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোহাগকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। নিহত সোহাগ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে এবং দীর্ঘদিন ধরে ঐ এলাকায় ভাঙারির ব্যবসা করে আসছিলেন।
পুলিশ এ ঘটনায় জনি ও মঈনসহ এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করেছে।
এই বর্বর হত্যাকাণ্ড এবং তার প্রেক্ষিতে ছাত্রদলের অভ্যন্তরে যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, তা রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি অনন্য সামাজিক ও নৈতিক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:








