বুধবার

১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২ পৌষ, ১৪৩২

হাসিনার পালানোর দৃশ্য ও যেসব স্মৃতির সাক্ষী হচ্ছে ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩ জুলাই, ২০২৫ ১৬:১১

শেয়ার

হাসিনার পালানোর দৃশ্য ও যেসব স্মৃতির সাক্ষী হচ্ছে ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’
ছবি : সংগৃহীত

জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়। এখন চলছে জাদুঘরের জন্য স্মারক সংগ্রহের কাজ। আগামী ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাদুঘরটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে জুলাই আন্দোলনের স্থিরচিত্র, বিভিন্ন স্মারক, নানা উপকরণ, শহীদদের জামাকাপড়, চিঠি, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, ওই সময়ের পত্রিকার কাটিং, অডিও-ভিডিওসহ বিভিন্ন স্মৃতি স্মারক থাকবে। এছাড়া সেখানে বিশেষ স্থান পাচ্ছে স্বৈরাচার ও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও। এ জাদুঘর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরেরই একটি অংশ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সচিব মো. সাদেকুল ইসলাম জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের বিষয়টি সরাসরি মন্ত্রণালয় দেখভাল করছে। এজন্য এ বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে চান না।

তবে উদ্বোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে। প্রধান উপদেষ্টা সশরীরে উপস্থিত থেকে জাদুঘরের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের জন্য স্মারক সংগ্রহ করতে আর্কাইভ ও কালেকশন টিম দেশজুড়ে কাজ করছে। দেশের কারও কাছে কোনো স্মৃতিস্মারক থাকলে তা জাদুঘরে পৌঁছানোর জন্য বিজ্ঞাপন সম্প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এই জাদুঘরের সংগ্রহশালা যেন জুলাইয়ে সংগঠিত ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের কথা স্মরণ করে দেয়, সে লক্ষ্যে সব ধরনের আয়োজন উপস্থাপনের নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

সরেজমিন জানা যায়, গণভবনের সীমানা প্রাচীরের কাজ কিছুটা সংস্কার করা হয়েছে। আবার কোথাও আগের অবস্থায় রয়েছে।

দায়িত্বপ্রাপ্তদের কয়েকজন জানান, ছাত্র-জনতার জনস্রোতে ৫ আগস্ট গণভবনে যে ভাঙচুর হয়েছে, তা আগের অবস্থায় রেখে দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য জায়গায় নতুন স্থাপত্য নকশায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে কিছু পূর্তকাজ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এর প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ। বাকি কাজও দ্রুতগতিতে চলছে। কম সময়ের মধ্যে সেসব কাজও শেষ হবে।

তারা বলেন, গত জুলাই-আগস্টে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পরই গণভবনের ফটক আক্ষরিক অর্থেই খুলে গিয়েছিল। উল্লসিত জনতার মিছিল ঢুকে পড়ে গণভবনে। ভবনটির শোয়ার ঘর থেকে শুরু করে পুরো ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষের অবাধ বিচরণক্ষেত্র ও উৎসবের কেন্দ্রে। তবে ৮ আগস্ট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গণভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর থেকে সরকারের অনুমতি ছাড়া সেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরসংশ্লিষ্টরা জানান, গণভবনের জমির পরিমাণ ১৭ দশমিক ৬৮ একর অর্থাৎ, ৫৩ বিঘা। সেখানে দুই তলাবিশিষ্ট একটি ভবন এবং কর্মচারীদের জন্য একতলার কয়েকটি পাকা এবং সেমিপাকা স্ট্রাকচার ছিল। গত ১ জানুয়ারি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গণভবনের বরাদ্দ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দেয়। এ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ গণভবনে নির্মাণাধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের সার্বিক তত্ত্বাবধান করছে।

তারা আরও জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর ক্যাম্পাসটি এখনো ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানীতে এক টুকরো সবুজ। গণভবন হিসাবে তকমা পাওয়া ভবনটিকে নিছক একটি দালান মনে হলেও বাস্তবে অনেক বেশি কিছু। অর্ধশত বিঘা জায়গাজুড়ে অবস্থিত ওই ক্যাম্পাসে রয়েছে-লন, পুকুর, খেতসহ নানা ধরনের ফলের বাগান। প্রাকৃতিক পরিবেশে তৈরি হওয়া জুলাই স্মৃতি জাদুঘরটি নগরবাসীর সুস্থ বিনোদনেরও একটি জায়গা হবে। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার বীরত্বগাথা জানার পাশাপাশি তারা মনোরম পরিবেশও উপভোগ করতে পারবেন।



banner close
banner close