
দীর্ঘ ১৩ বছর পর মুক্তি পেলেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ থেকে খালাস পাওয়ার পর মুক্তি পেয়েছন তিনি। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে মুক্ত হলেন আজহারুল ইসলাম।
এটিএম আজহারুল ইসলামের মতোই দেলয়ার হোসেন সাঈদি, কাদের মোল্লা, মতিউর রহমান নিজামী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও বলতে পারতেন আমি আজ মুক্ত, আমি আজ স্বাধীন। তবে সেই সুযোগ তারা পাননি। তথা কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় দিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
বিস্তারিত: https://www.youtube.com/watch?v=Fria7JvUkDo
২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে কাদের মোল্লার ফাঁসি কর্যকর করা হয়। সেসময় জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের অনুরোধ উপেক্ষা করেই কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করে শেখ হাসিনা।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কাদের মোল্লা তার গ্রামে কোনো গণ-হত্যায় সহযোগিতা করেনি। এমনকি মানবতাবিরোধী অপরাধে তিনি জড়িত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন তার গ্রামের সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি কাদের মোল্লাকে যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন তারা স্বীকার করেছেন কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
কাঁদের মোল্লার বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। কাঁদের মোল্লাকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কাঁদের মোল্লার মতোই ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয় জামায়াতের সাবেক আমীর মতিউর রহমান নিজামী, আলী হাসান মুজাহিদসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতাকে। ২০১৫ সালে জামায়াত নেতা আলী হোসেন মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর। আর মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হয় ২০১৬ সালের ১১ মে। এছাড়া মুহাম্মদ কামরুজ্জামান ও মীর কাশেমকেও ফাঁসি দেয় হাসিনা সরকার।
হাসিনার তথা কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যদণ্ড দেয়া হয় বিএনিপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাঁদের চৌধুরীকে। যেখানে সালাউদ্দিন কাঁদের চৌধুরী টিভি টোক গুলোতে বলতেন তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন না। মানবতাবিরোধী কোনো কাজ তিনি করেননি। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কারণে তার উপর এই দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে।
এছাড়া ইসলামিক বক্তা দেলোয়ার হোসেন সাঈদিকেও মানবতাবিরোধী মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তবে তার পরিবারের অভিযোগ দেলোয়ার হোসেন সাঈদিকে ইনজেকশন পুশ করে হত্যা করা হয়েছে।
এখনো পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৫৫টি রায় দেয়া হয়েছে। এই রায়ে ১৪৯ জনকে সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল। এরমধ্যে ৯৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। যাদের বেশিরভাগই পলাতক। কথিত এই মানবতাবিরোধী মামলায় প্রথম রায় দেয়া হয় আবুল কালাম আজাদকে।
আবুল কালাম আজাদকে পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় হাসিনার মদপুষ্ট বিচারকরা। তিনি মানবতাবিরোধী কোনো কাজে যুক্ত ছিলেন না বলে জানিয়েছে তার গ্রামের মানুষ। বরং তিনি মানুষের সেবায় কাজ করতেন বলেও জানা যায়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাদেরকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে তাঁদের বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এ নিয়ে জামায়াতের আমীর ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেছেন জামায়াত নেতাদের উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
দীর্ঘ ১৩ বছর পর মুক্ত হয়ে এটিএম আজহারুল ইসলামও জুডিশিয়াল কিলিং এর কথা বলেছেন। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের কথিত মানবতাবিরোধী আখ্যা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন এটিএম আজহারুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: