মঙ্গলবার

২০ মে, ২০২৫
৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
২৩ জিলক্বদ, ১৪৪৬

এবার ঢাকা অচলের হুঁশিয়ারি ইশরাকের সমর্থকদের

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০ মে, ২০২৫ ১৭:১৫

শেয়ার

এবার ঢাকা অচলের হুঁশিয়ারি ইশরাকের সমর্থকদের
ইশরাকের সমর্থকদের নগরভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি। ছবি : সংগৃহীত

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে বুধবারের  মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার ঘোষণা না এলে ঢাকা অচলের ঘোষণা দিয়েছেন তার সমর্থকরা। একইসঙ্গে আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে আবারও নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার  বিকেলে ষষ্ঠ দিনের অবস্থান কর্মসূচি থেকে ঢাকাবাসীর পক্ষে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাবেক সচিব মশিউর রহমান। তিনি বলেন, আমরা বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর মধ্যে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না এলে আবারও সকাল ১০টায় একত্রিত হয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি করব। একইসঙ্গে ঢাকা অচলেরও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

এ সময়, কর্মসূচি ঘোষণার মঞ্চে এই আন্দোলন এবং দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বস্তরের কর্মচারী ইউনিয়ন। তাদের পক্ষ থেকে তাদের নগরবাসীর প্রত্যেক নাগরিকসেবা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।

এ সময় সিটি করপোরেশনের প্রত্যেক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত হয়ে ঢাকাবাসীর এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তারা ঘোষণা করেন- বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে দাবি মানা না হলে এরপর থেকে পরিচ্ছন্নতা সেবা, ময়লা পরিবহন সেবা এবং বিদ্যুৎ সেবাসহ সব ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে। সংগঠনগুলো হলো স্ক্যাভেঞ্জার অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, পরিবহন চালক ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন, বিদ্যুৎ কর্মচারী সমাজকল্যাণ সমিতি ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমাজ কল্যাণ সমিতি।

অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে নগর ভবনের সামনের সড়কে বসে অবরোধ করেছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। নগর ভবনের প্রধান ফটকের সামনে একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে জাতীয় সংগীত, দেশাত্মবোধক গান বাজানো হয়। এ সময় তারা ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকেন তারা। সড়কে অবস্থানের কারণে বঙ্গবাজার থেকে গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজার পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচির কারণে নগর ভবন কার্যত অচল। সেখানে কোনো ধরনের দাপ্তরিক কাজ হচ্ছে না। দুর্ভোগে পড়েছেন সেবা নিতে আসা লোকজন। সিটি করপোরেশন নগরবাসীকে যে ২৮ ধরনের সেবা দিয়ে থাকে তা এখন বন্ধ রয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে নির্বাচন হয় ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। সেই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ইশরাক হোসেন। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মেয়র পদ থেকে শেখ ফজলে নূর তাপসকে অপসারণ করে সরকার। অন্যদিকে চলতি বছরের ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ইশরাক হোসেনকে গত সিটি নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এরপর ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।

নগর ভবনকে ঘিরে চলমান আন্দোলন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অবস্থান নিয়ে গতকাল এক ফেসবুক পোস্টে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন লিখেন, ‘সর্বশক্তি দিয়ে এরা ঢাকায় বিএনপির মেয়র আটকানোর চেষ্টার মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কী ভূমিকা পালন করবে, তা ক্লিনকাট (পরিষ্কার) বুঝিয়ে দিল।’ যারা নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়ে একটি দলের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন, অবিলম্বে তাদের পদত‍্যাগ দাবি করেন ইশরাক। ফেসবুকে তিনি আরও লিখেছেন, ‘মেয়রফেওর কিছু না। অন্তর্বর্তী সরকারের কতিপয় ব্যক্তির অন্তরে ক্ষমতার লোভ ও এটি চিরস্থায়ী করার কুৎসিত সত্যটা বের করে আনাটাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য।’

অন্যদিকে ইশরাকের পক্ষে এই আন্দোলন গায়ের জোরে করা হচ্ছে বলে গতকাল ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তার পোস্টে মেয়র হিসেবে ইশরাকের শপথ না হওয়ার পেছনে ১০টি জটিলতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, ‘এসব জটিলতা নিরসন না করা পর্যন্ত শপথ গ্রহণ সম্ভব নয়। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বরং গায়ের জোরে আদায় করার উদ্দেশ্যেই নগর ভবন বন্ধ করে মহানগর বিএনপি এই আন্দোলন চালাচ্ছে। ফলে সিটি করপোরেশনের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হওয়াসহ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।’

banner close
banner close