
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, ‘জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কবে করা যায় তার তারিখ সুনির্দিষ্ট করে বলুন। কোনোভাবে যদি ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে তাহলে কেউ কিন্তু বাঁচতে পারবেন না।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল নগরের সদর রোডের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘আমাদের দেশে ১২ কোটি ভোটার। তার মধ্যে শ্রমিক হচ্ছে ৭ কোটি ৩৫ লাখ। যারা ভোট দিয়ে আমাদের সরকার নির্বাচিত করে, যারা ভোট দিয়ে সরকার গঠন করে তারা বঞ্চিত, তারা নির্যাতিত, তারা অসহায়। কথায় কথায় তাদের ছাঁটাই করা হয়, তাদের আয় দিন দিন কমে যাচ্ছে, তাদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল ২০২৩-একটি আইন করে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার অধিকার শেখ হাসিনা বন্ধ করে দিয়েছে। যতটুকু আইন করা হয়েছিল, সেটি করা হয়েছিল মালিকের স্বার্থে, শ্রমিকদের স্বার্থে নয়। তাই আজ জুটমিল, চিনিকল, গার্মেন্টস শিল্পসহ প্রতিটি জায়গায় শ্রমিকরা জীবন দিচ্ছে।’
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরির জন্য আন্দোলনে শেখ হাসিনার পেটুয়া বাহিনী, শেখ হাসিনার র্যাব, শেখ হাসিনার পুলিশ গুলি চালিয়েছে। তারা গুলি চালিয়ে মহিলা শ্রমিক আঞ্জুমান আরা খাতুনকে হত্যা করেছে। শ্রমিক জালাল উদ্দিনকে হত্যা করলো, শ্রমিক রাসেলকে হত্যা করলো। শেখ হাসিনার গুলিতে শুধু ছাত্র নয়, শুধু জনতা নয়, শ্রমিকদেরও রক্ত গেছে। সেই রক্তে রচিত হয়েছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের সেই মহাবিপ্লব। যে আন্দোলনের শতাধিক শ্রমিক শহিদ হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকরা ১৮৮৬ সালে আমেরিকায় শুধু জীবন দেয়নি, আজও জীবন দিচ্ছে, আজও মারা যাচ্ছে, আজও রক্ত ঝরাচ্ছে। কিন্তু আমরা তাদের মূল্যায়ন করি না। আমরা তাদের খবর রাখি না। দেশের ক্রান্তিকাল এখনো শেষ হয়নি, আজও শ্রমিকদের আয় দিন দিন কমে যাচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘বিগত সরকারের গণবিরোধী নীতিমালার কারণে জুটমিলগুলো বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। আর বেকার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক। একই কারণে চিনিকলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি মানবতার করিডোর দিতে চান বার্মার রাখাইন রাজ্যে, যেখানে দুর্ভিক্ষ হচ্ছে। আপনি জনগণের কী আকাঙ্খা সেটি শুনবেন না। আপনি রাজনৈতিক দল যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যাদের ছেলেরা জীবন দিয়েছে, যাদের ছেলেরা অদৃশ্য হয়ে গেছে, খুনের শিকার হয়েছে, সেই সমস্ত রাজনৈতিক দলের কথা আপনি শুনবেন না। আপনি এককভাবে আপনার কয়েকজন অ্যাডভাইজার নিয়ে মানবতার করিডোর করবেন। সেখানে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের নিরাপত্তা কোন জায়গায় যাবে সেটি জনগণের কাছে পরিষ্কার না করে আপনি করিডোর দিতে চাচ্ছেন। আপনি নির্বাচিত নন, কিন্তু আপনি তো জনগণের ও রাজনৈতিক দলের সমর্থিত সরকার। এজন্য আপনাকে জনগণের সেন্টিমেন্ট অনুযায়ী কাজ করতে হবে।’
মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক ফয়েজ আহমেদ খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এছাড়াও বক্তব্য দেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কুদ্দুসুর রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন, ওবায়দুল হক চান, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক প্রমুখ।
আরও পড়ুন: