মঙ্গলবার

২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৮ পৌষ, ১৪৩২

বেগম জিয়াকে নিয়ে জাইমা রহমানের আবেগঘন স্ট্যাটাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:৪২

আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:৪৪

শেয়ার

বেগম জিয়াকে নিয়ে জাইমা রহমানের আবেগঘন স্ট্যাটাস
সংগৃহীত ছবি

বহু বছর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কন্যা জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন। দেশে ফেরার প্রাক্কালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ঘিরে নিজের শৈশবের স্মৃতি তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন জাইমা রহমান।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ফেসবুক পেজে দাদির সঙ্গে তোলা শৈশবের একটি ছবি শেয়ার করেন তিনি। পরে বিএনপির মিডিয়া সেলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও সেই পোস্টটি পুনরায় প্রকাশ করা হয়।

স্ট্যাটাসে জাইমা রহমান লেখেন, দাদুকে নিয়ে তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতিগুলোর একটি হলো—পরিবারের অভিভাবক হিসেবে তার অগাধ মমতা। তখন তার বয়স ছিল মাত্র এগারো বছর। স্কুল ফুটবল টিম একটি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল এবং তিনি নিজেও একটি মেডেল পেয়েছিলেন। সেই আনন্দ ভাগ করে নিতে মা তাকে সরাসরি দাদুর অফিসে নিয়ে যান, যেন নিজের মুখেই দাদুকে বিজয়ের গল্প বলতে পারেন। গোলকিপার হিসেবে কীভাবে খেলেছেন, তা উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলতে বলতে তিনি অনুভব করেছিলেন—দাদু গভীর মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছেন। সেই সাফল্যে দাদু এতটাই গর্বিত হয়েছিলেন যে, পরবর্তীতে অন্যদের কাছেও সেই গল্প বারবার বলতেন।

তিনি আরও বলেন, তিনি সবসময়ই জানতেন, দাদুর কাঁধে একটি দেশের বিশাল দায়িত্ব। তবুও পরিবারের কাছে দাদু ছিলেন একজন স্নেহশীল অভিভাবক। দেশবাসীর কাছে তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, আর তাদের কাছে ছিলেন শুধু ‘দাদু’। তিনি নাতি-নাতনিদের সময় দিতেন, খোঁজখবর রাখতেন এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগাতেন। এসব ছোট ছোট অভিজ্ঞতা থেকেই নেতৃত্বের প্রথম পাঠ তিনি পেয়েছেন—নম্রতা, আন্তরিকতা এবং মনোযোগ দিয়ে শোনার গুণ।

জাইমা রহমান লেখেন, দেশের বাইরে কাটানো সতেরোটি বছর তার জীবনকে নানা দিক থেকে বদলে দিয়েছে। কিন্তু নিজের শিকড় তিনি কখনো ভুলে যাননি। সংস্কৃতি, মূল্যবোধ আর পরিচয়ই একজন মানুষকে গড়ে তোলে। প্রবাসে থাকা অনেক বাংলাদেশির মতো তিনিও দীর্ঘ সময় ভিন্ন দেশে কাটিয়েছেন। লন্ডনের জীবন তাকে বাস্তববাদী ও বিশ্বমুখী করেছে, যদিও তার হৃদয় বরাবরই বাংলাদেশে থেকেছে।

তিনি উল্লেখ করেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাকে শৃঙ্খলা ও জ্ঞান দিয়েছে, আর মানুষের সঙ্গে কাজ করা শিখিয়েছে দায়িত্ববোধ ও মানবিকতা। আইন পেশায় কাজ করার সময় মানুষের জীবনের বাস্তব গল্পগুলো তাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। প্রতিটি মামলা, প্রতিটি ক্লায়েন্ট কারও না কারও জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। অবিচার ও অবহেলার শিকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শোনা এবং সমাধানের চেষ্টা করাই ছিল তার কাজ। জীবনের কঠিন সময়ে কারও পাশে থাকার যে শিক্ষা, তা কোনো শ্রেণিকক্ষ দিতে পারে না।

তিনি আরও লেখেন, তিনি কখনো নিজের দাদাকে দেখেননি, তবে তার সততা ও দেশপ্রেমের গল্প শুনেই বড় হয়েছেন। সেই আদর্শই দাদু ও বাবার মাধ্যমে বহমান রয়েছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ও ৫ আগস্টের আগে-পরে তিনি নেপথ্যে থেকে যতটুকু পেরেছেন, দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছেন। অধিকাংশ সময় কথা বলার চেয়ে শুনেছেন বেশি এবং ছোট ছোট কাজে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন।

স্ট্যাটাসে জাইমা রহমান জানান, দীর্ঘ বিরতির পর দেশে ফেরা তার জন্য আবেগ ও অনুভূতির এক বিশেষ মুহূর্ত। দেশে ফিরে তিনি দাদুর পাশে থাকতে চান এবং বাবাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে চান। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে দেশের জন্য নিজের সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে চান। মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে বাংলাদেশকে নতুনভাবে জানতে চান এবং দেশকে আবার এগিয়ে যেতে দেখতে চান।

তিনি বলেন, তার পরিবারকে ঘিরে মানুষের কৌতূহল ও প্রত্যাশা রয়েছে—কখনো তা আশার, কখনো প্রশ্নের। সেই প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্বও তারা অনুভব করেন।

সবশেষে তিনি লেখেন, নিজের ভাষায় এটাই তার গল্প। প্রত্যেক মানুষেরই আলাদা গল্প রয়েছে। সেই গল্পগুলোকে সম্মান জানিয়ে, হয়তো সবাই একসঙ্গে সামনে এগিয়ে যেতে পারে।



banner close
banner close