চব্বিশের জুলাই–আগস্ট আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সংসদ-সদস্য প্রার্থীদের নিরাপত্তা জোরদারে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ২০ জনকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য গানম্যান দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আত্মরক্ষার প্রয়োজনে ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়েও প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ছয়জন নেতাও রয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যাদের গানম্যান দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন—অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা। এছাড়া গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁনও এই তালিকায় রয়েছেন।
এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা ও সংসদ-সদস্য প্রার্থীরাও নিরাপত্তা জোরদারের আবেদন জানিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের জন্য সার্বক্ষণিক গানম্যান ও বাসভবনে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েনের আবেদন করা হয়েছে। একইভাবে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহম্মেদ সেখসহ আরও কয়েকজন নিরাপত্তা চেয়েছেন।
এর বাইরে ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে নিহত ওসমান হাদির পরিবারকেও বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার এক বোনকে অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান দেওয়া হচ্ছে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন রাজনীতিক গানম্যান বা অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছেন। পাশাপাশি প্রায় ২৫ জন সরকারি কর্মকর্তাও অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। আবেদনকারীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম জানান, যাদের ঝুঁকি বেশি, তাদের ক্ষেত্রে অস্ত্রধারী নিরাপত্তাকর্মী দেওয়া হচ্ছে। আর যাদের ঝুঁকি তুলনামূলক কম, তাদের চলাফেরা ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে চাহিদা বেশি হওয়ায় সবার জন্য গানম্যান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যারা শিক্ষার্থী বা গণপরিবহন ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রে বাস্তব জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এসব বিষয় সমাধানে সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা চলছে।
আরও পড়ুন:








