দেশের গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের টেকসই উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে চান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সাংবাদিকদের সুরক্ষা, স্বাধীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালীকরণে তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন, যা গণমাধ্যম খাতে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের পথ খুলে দিতে পারে।
সোমবার রাজধানীর তথ্য ভবনে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, নিজের অবস্থান থেকে এই আইনগুলোর কাজ শুরু করবেন এবং পরবর্তী সরকার যেন এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখে—সেই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন। তার এই বক্তব্যে গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তার গভীর দায়বদ্ধতারই প্রতিফলন দেখা যায়।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান জানান, সম্প্রচার খাতকে একটি শক্ত আইনগত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে তিনি সম্প্রচার নির্দেশিকা, সম্প্রচার কমিশন আইন এবং স্বায়ত্তশাসিত সরকারি গণমাধ্যম গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। পাশাপাশি একটি স্বাধীন ও কার্যকর গণমাধ্যম কমিশন গঠনের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রয়েছে।
তিনি বলেন, কেবল নামের আগে ‘স্বাধীন’ শব্দ ব্যবহার করলেই প্রকৃত স্বাধীনতা আসে না; বরং প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমের কাঠামো এমন হতে হবে, যা সমাজে বাস্তব ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তার এই বক্তব্য গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা ও গুণগত মান বৃদ্ধির দিকেই ইঙ্গিত করে।
গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সাংবাদিকদের সুরক্ষা অপরিহার্য উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের এমন ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে সমাজ সর্বদা তাদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেয়।
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের অর্থায়ন নিয়ে তিনি একটি মানবিক ও সাহসী অবস্থান নেন। সরকারের দেওয়া অনুদান থেকে ২৫ শতাংশ কমিশন কেটে নেওয়ার প্রথা বন্ধে তিনি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। তার মতে, সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য বরাদ্দ অর্থ থেকে এ ধরনের কাটছাঁট কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের দ্বিতীয় কিস্তিতে সোমবার ১৬৮ জন সাংবাদিককে এক কোটি এক লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে দুই কিস্তিতে ৬৭৭ জন সাংবাদিক ও তাঁদের পরিবারকে চার কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।
ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ৬৯৫ জন সাংবাদিক বা তাঁদের পরিবারকে মোট ৫৬ কোটি ৮৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকার কল্যাণ অনুদান ও বৃত্তি দেওয়া হয়েছে—যা দেশের সাংবাদিক সমাজের পাশে সরকারের ধারাবাহিক সহায়তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
আরও পড়ুন:








