শুক্রবার

১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৪ পৌষ, ১৪৩২

আজ সন্ধ্যায় দেশে আসবে হাদির মরদেহ, কাল জানাজা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৪:৩৫

শেয়ার

আজ সন্ধ্যায় দেশে আসবে হাদির মরদেহ, কাল জানাজা
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আনা হবে। আগামীকাল শনিবার বাদ জোহর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে হাদির জানাজা হবে। এদিন সারাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

এনসিপির স্বাস্থ্য সেলের প্রধান ও হাদির চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকা ডা. আব্দুল আহাদ সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ওসমান হাদির মরদেহ শুক্রবার বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুর থেকে রওয়ানা হবে। সম্ভাব্য সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করবে বিমানটি।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হাদি সাত দিন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের লড়াকু যোদ্ধার মৃত্যুতে আগামীকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। গতকাল রাতে সিঙ্গাপুরে হাদির মৃত্যুর খবর আসার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেছেন, ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব নেবে রাষ্ট্র।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে হাদির মরদেহ দেশে পৌঁছাবে। আগামীকাল বাদ জোহর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা হবে। তবে দাফন কোথায়, সে সিদ্ধান্ত গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত জানা যায়নি।

ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে বলা হয়, আজ শুক্রবার বাদ জুমা দেশের সব মসজিদ এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ে জুলাই জজবার প্রাণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অকুতোভয় বীর, শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মাগফেরাতের জন্য দেশবাসীকে দোয়ার আহবান জানানো হচ্ছে। এবং সহিংসতা পরিহারপূর্বক নিজ নিজ এলাকায় খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করবার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

হাদির মৃত্যুর পর শোক জানিয়ে ফেসবুকের ভেরিফায়েড আইডি থেকে পোস্ট করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। এই মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়েছে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।

এনসিপি স্বাস্থ্য সেলের প্রধান ও হাদির চিকিৎসায় নিয়োজিত ডা. আহাদ ভিডিও বার্তায় তাঁর মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ডা. আহাদ জানান, ‘সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে আমরা খবর পেয়েছি, হাদি ভাই পরপারে চলে গেছেন।’

এর আগে বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বুধবার সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে হাদিকে দেখতে যান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান। পরে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে হাদির শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানান। ওই বার্তার পর থেকে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছিল। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তাঁর জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করেন।

গতকাল রাতে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে এক বার্তায় বলা হয়, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।’

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি নির্বাচন করার জন্য প্রচার চালাচ্ছিলেন। গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে তাঁকে গুলি করা হয়। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। গত সোমবার দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সঙ্গে তাঁর ভাই ছাড়াও বাংলাদেশি চিকিৎসক ও নার্সরা গিয়েছিলেন।

সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, ১২ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ২৫ মিনিটের দিকে হাদিসহ দুজন একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় যাচ্ছিলেন। তখন মোটরসাইকেলে আসা ব্যক্তিরা তাঁকে গুলি করে পালিয়ে যায়। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। তখনই চিকিৎসকরা জানান, তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রেখে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গুলির খণ্ডিতাংশ বের করা হয়। সন্ধ্যায় তাঁকে স্থানান্তর করা হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। সেখান থেকে ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।

ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মিলিয়ে গুলির ঘটনায় দুজনকে শনাক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ গুলি ছোড়েন এবং তাঁকে বহনকারী মোটরসাইকেলটি চালান আলমগীর হোসেন ওরফে আলমগীর শেখ। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গুলির ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন তারা।

শোক প্রকাশ

হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল পৃথক শোকবার্তায় তারা এ ঘটনাকে একটি চক্রান্তমূলক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেন এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

শোকবার্তায় তারেক রহমান বলেন, চক্রান্তকারী সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাদির মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তিনি বলেন, দেশজুড়ে পরিকল্পিতভাবে খুন ও জখমের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে, যা একটি সুদূরপ্রসারী নীলনকশার অংশ। গণতন্ত্র ও দেশের শত্রুরাই হাদিকে গুলি করে হত্যা করেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শোকবার্তায় বলেন, হাদির মৃত্যু দেশের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর পরাজিত শক্তির মদদপুষ্ট দুষ্কৃতকারীরা দেশে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে।

গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল রাতে দেওয়া এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, হাদি ছিলেন একজন সাহসী জুলাইযোদ্ধা ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক। অন্যায়ের কাছে তিনি কখনও মাথা নত করেননি। তাঁর কণ্ঠ ছিল আধিপত্যবাদী শক্তি ও সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শোকবার্তায় হাদির বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়েছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে।

এদিকে জুলাই ঐক্যের পক্ষ থেকেও তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদির মৃত্যু আন্দোলনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

হাদির মৃত্যুতে গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টিসহ (এবি পার্টি) বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে। তাঁকে একজন সাহসী, আপসহীন ও দেশপ্রেমিক তরুণ নেতা হিসেবে স্মরণ করেন। সহকর্মী ও অনুসারীদের মতে, তাঁর আদর্শ ও সংগ্রামী জীবন আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।



banner close
banner close