শুক্রবার

১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩ পৌষ, ১৪৩২

আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ইনসাফের বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন হাদি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২৩:৪২

শেয়ার

আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ইনসাফের বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন হাদি
সংগৃহীত ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের আলোচিত তরুণ রাজনীতিক, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য পদপ্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি আর নেই। গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, জুমার নামাজের পর দুপুর আনুমানিক ২টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর পল্টনের বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় তিনটি মোটরসাইকেলে আসা অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা ওসমান হাদির ওপর হামলা চালায়। এ সময় তার মাথায় গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এবং পরবর্তীতে ওয়ান-স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে নেয়া হয়। সে সময় তিনি গভীর কোমায় ছিলেন এবং তার জিসিএস স্কোর ছিল ৩।

অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

বেড়ে ওঠা ও শিক্ষাজীবন

শরিফ ওসমান হাদি, ওসমান হাদি নামেই পরিচিত ছিলেন, ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন মাদ্রাসা শিক্ষক ও স্থানীয় ইমাম। ছয় ভাইবোনের মধ্যে হাদি ছিলেন সবার ছোট।

তিনি নলছিটির একটি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং সেখান থেকে আলিম পাস করেন। পরে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকায় তিনি রামপুরা এলাকায় বসবাস করতেন।

জুলাই অভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক উত্থান

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং পরে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে ওসমান হাদি ছিলেন সামনের সারির যোদ্ধা। রামপুরা এলাকার সমন্বয়ক হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। জুলাই শহিদদের অধিকার রক্ষা, ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী অবস্থান এবং ‘ন্যাশনাল অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ইউনিটি’র ব্যানারে তিনি রাজপথে সক্রিয় ছিলেন।

গণঅভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা ও দাবির ভিত্তিতে তিনি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটির লক্ষ্য ছিল আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা।

নির্বাচনী ভাবনা ও রাজনৈতিক দর্শন

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন (মতিঝিল, শাহবাগ, রমনা, পল্টন ও শাহজাহানপুর) থেকে এমপি পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন হাদি। তিনি গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে এসে জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনে ‘চা-সিঙ্গারা’ আড্ডার মতো ব্যতিক্রমী কর্মসূচির আয়োজন করে আলোচনায় আসেন।

তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঠামোগত দুর্বলতার সমালোচনা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এছাড়া বিএনপি বা পুরানো ধারার রাজনীতির কঠোর সমালোচক ছিলেন তিনি। তার মতে, পুরানো ধারায় রাজনীতি করে কেউ ক্ষমতায় এলে তারা বেশিদিন টিকতে পারবে না।

হুমকি ও হামলাকারী শনাক্ত

হাদি এর আগেও একাধিকবার ফোনকল ও বার্তার মাধ্যমে হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কাছ থেকে তার বাড়িতে আগুন দেয়া এবং পরিবারের নারী সদস্যদের ক্ষতির হুমকিও দেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদ (দাউদ খান) এবং আলমগীর হোসেনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে ওসমান হাদি বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গন এবং তার অনুসারীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।



banner close
banner close