বুধবার

১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২ পৌষ, ১৪৩২

জুলাই নিয়ে যত ক্ষোভ সাংবাদিক আনিস আলমগীরের

সুজন মাহমুদ

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০৯:৪২

আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০৯:৪৪

শেয়ার

জুলাই নিয়ে যত ক্ষোভ সাংবাদিক আনিস আলমগীরের
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় গ্রেফতার সাংবাদিক আনিস আলমগীর আদালতে রিমান্ড শুনানিতে বলেছেন, আমি ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে চাই, রাজনৈতিক বাধা আমাকে থামাতে পারবে না। সোমবার বিকেলে সাংবাদিক আনিসকে আদালতে তোলা হয়। এসময় শুনানিতে সরকারের নীতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেন তিনি।

আদালতে আনিস বলেন, তালেবানরা তাকে এরেস্ট করেছিল। তখনই মৃত্যুভয় দূর হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক হিসাবে তিনি ক্ষমতাকে প্রশ্ন করেন। অতীতেও করেছেন ভবিষ্যতেও করবেন। হালুয়া-রুটি খাওয়া সাংবাদিক হতে চান না। তার বক্তব্যেও কোনো অনুসুচনা ছিলো না বলে জানিয়েছে আইনজীবীরা। তাই পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত।

জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ভারতীয় গুপ্তচর এবং পতিত স্বৈরাচারের দোসর আনিসকে ডিবি অফিস গ্রেফতার না দেখালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোরাও করার ঘোষণা দেয় গণ-অভ্যুত্থানের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম জুলাই ঐক্য এবং সহযোগী সংগঠন মঞ্চ ২৪।

এর আগে রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রাজধানীর ধানমণ্ডির একটি জিম থেকে তাঁকে আটক করা হয়। এরপর ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

প্রতিনিয়তই আওয়ামী বয়ান বাস্তবায়ন ও মুজিবকে নিয়ে নিজেকে সরব রেখেছেন বিতর্কিত এই সাংবাদিক। সম্প্রতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মাদ ইউনূসকে নিয়েও করেছেন বিরূপ মন্তব্য। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেন। যা সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে বলে মনে করছে অনেকেই।

আবার, বিভিন্ন সময় ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পক্ষে সাফাইও গেয়ে চলছেন বিতর্কিত এই সাংবাদিক। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ. লীগের সাথে আলোচনার পথ রাখা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এভাবে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে কৌশলে অবস্থান নিয়েছেন আনিস। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে আওয়ামী লীগ পরোয়া করে না। আওয়ামী লীগকে এখনো সুসংগঠিত দলে হিসেবে বিবেচনা করতে দেখা গেছে তাকে।

আবার আওয়ালীগের অপ্রকাশ্য নেতারা সরকারকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে মন্তব্য করেছে আনিস।

বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামকে নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন আনিস। তিনি বলেছেন, কোরবানির মাংসও সাধারণ মানুষকে না দিয়ে জামায়াত দলীয় লোকদের দেয়। বিষয়টি বলে তাচ্ছিল্যের হাসি দেন আনিস।

এমনকি জামায়াতকে স্মার্ট চোর বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তার মতে, পাঁচ আগস্টের পর জামায়াত প্রশাসন দখল করেছে।

এ ছাড়া, জামায়াতের সমালোচনা করলে কণ্ঠরোধ করা হয় বলে টকশোতে এসে মিথ্যা অভিযোগ করতে দেখা গেছে তাকে।

এর আগে একটি টিভি টকশোতে এসে প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন এই সাংবাদিক। তিনি বলেন, ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন ও তার মালিকানাধীন গ্রামীণ ব্যাংকে হামলা হবে। এর মাধ্যমে মূলত সন্ত্রাসবাদকে উসকে দেন তিনি।

এছাড়া ২০২৪ এ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের পাকিস্তানের চর হিসেবে উল্লেখ করেন এই সাংবাদিক। তার মতে, ২৪ এর বিপ্লবীরা এখনো ৭১ এর এর মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিতে পারেনি। আর তাই ৭১ এর কথা শুনলে তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়।

এ ছাড়া, ডক্টর ইউনূস সরকারের প্রতি মানুষ হতাশ বলে দাবি করেছে এই বিতর্কিত সাংবাদিক। তিনি বলেছেন, সবাই অপেক্ষা করছে এই সরকার কখন বিদায় নেবেন।

প্রকাশ্যে জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালি দেয়া, জুলাইয়ের স্পিরিটকে নিয়ে কটূক্তি এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে হত্যাযোগ্য করে তুলেছিল আনিস আলমগীর গং। জুলাই চেতনাকে খাটো করে কথা বলতেও ছাড়েননি এই সাংবাদিক। তিনি বলেছেন জুলাই নিয়ে ব্যবসা এখন জমজমাট চলছে।

এমনকি জুলাইয়ের পরে সব ধরণের মব সংস্কৃতির জন্য অভ্যুত্থানের নায়কদের হয়ে করে কথা বলেছেন আনিস।

পাঁচ আগস্টের মুক্তিযোদ্ধাদের টার্গেট করে নির্যাতন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

এই পরিস্থিতিতে আনিসের গ্রেপ্তারের খবর গণমাধ্যমের মাধ্যেমে জানতে পারে মঞ্চ ২৪। সংগঠনটি বলছে, শেখ হাসিনার একনিষ্ঠ সহচর, সাংবাদিকতার নামে তথ্য সন্ত্রাস করা আনিস আলমগীরকে আটক করেছে ডিবি। তবে, দুঃখজনকভাবে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়েছে বলে জানতে পারে সংগঠনটির নেতারা। শুধু বাংলাদেশ সরকার থেকে নয়, ভারতীয় লবিস্টরা তাকে ছাড়ানোর জন্য চাপ তৈরি করছে বলেও অভিযোগ করে তারা। তবে শেষ পর্যন্ত এসব চক্রান্ত সফল হয়নি।

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাংবাদিক আনিস আলমগীর ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর আগে, রবিবার রাতে জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ উত্তরা পশ্চিম থানায় এ অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে আনিস আলমগীর ও মেহের আফরোজসহ আরও দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং আদালাতের ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হাসিনার পক্ষে কাজ করা এসব দোসরদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।



banner close
banner close