‘যে যেখানে যে কয়টা পাবা, মেরে ফেলবা’, ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের সময় এভাবেই ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন দেড় দশকের গুম, খুন ও জঙ্গী নাটকের রচয়িতা ফ্যাসিস্ট হাসিনা।
শুধু তাই নয়, গণহত্যার পর পালিয়ে গিয়েও রক্তপিপাসা মেটেনি হাসিনার। ভারতের আশ্রয়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত হাসিনা এখনো চালাচ্ছেন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, করছেন বিপ্লবীদের হত্যার পরিকল্পনা।
খুনি হাসিনা ও তার সহযোগিরা দেশ ছেড়ে পালালেও রেখে গেছেন কিছু কালচারাল ফ্যাসিস্ট ও সাংবাদিক, যাদের মূল দায়িত্ব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সংবাদপত্র ও টেলিভিশন টকশোতে গিয়ে আওয়ামী বয়ান তৈরি করা ও আওয়ামী লীগের অপকর্মকে নরমালাইজ করা। আর তাদেরই একজন আওয়ামী প্রেমী সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না৷
জুলাইয়ের আগে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই সাংবাদিক এখন সুশীল সেজেছেন। নিজের এক ইউটিউব চ্যানেলে প্রায়ই এসে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলেন। লীগের ভোট বাড়ছে বলেও আশা প্রকাশ করতে দেখা যায় তাকে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিয়েও সমালোচনা করতে ছাড়েননি পান্না। ভারতীয় এক সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে বলেন, জামায়াতে ইসলামী দেশের গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে।
পান্না মন্তব্য করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে জামায়াত।
ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে একের পর এক মিথ্যাচার করে হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নেও বড় ভূমিকা রাখছে সাংবাদিক পান্না।
এক টিভি টকশোতে হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের দুই বছরের কারাদণ্ড নিয়েও বেশ চটেছেন পান্না। কোন ভাবেই এ রায় যেন মানতে চায় না সে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়েও বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্র করে গেছেন সাংবাদিক পান্না। সমালোচনার নামে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন প্রতিনিয়ত।
শেখ মুজিবের ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাড়ি নিয়েও মায়াকান্না দেখিয়েছিলেন মঞ্জুরুল আলম পান্না। চটেছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমীকে বিনা অপরাধে দীর্ঘ ৮ বছর ‘আয়না ঘরে’ গুম রেখেছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকার। তাঁকে নিয়েও ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন প্রডাকশন বয় থেকে সাংবাদিক বনে যাওয়া পান্না। ভারতীয় গুজব মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গত ২৮ আগষ্ট মঞ্চ-৭১ নামক একটি সংগঠন আওয়ামী লীগ দোসরদের সমন্বয়ে একটি গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। সেদিন জুলাই যোদ্ধদের তোপের মুখে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ।
পরবর্তীতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয় তাদের বিরুদ্ধে। গত ১৩ নভেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান সাংবাদিক মঞ্জুরুল। প্রশ্ন থেকে যায়,দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এ সাংবাদিক কিভাবে মুক্তি পেলেন?
হাসিনার প্রেসক্রিপশনে বয়ান দেয়া আরেক সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে আটকের আবারও সুশীলতা দেখান পান্না।
সবশেষ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শফির ওসমান বিন হাদিকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার ঘটনাকে ম্যাটিকুলাস ডিজাইন হিসেবে আক্ষা দিয়ে জলঘোলা করতে চেয়েছেন মঞ্জুরুল আলম পান্না। এক ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে।
হাসিনা পালালেও মাসুদ কামাল,আব্দুন নুর তুষার, মঞ্জুরুল আলম পান্না, আনিস আলমগীরসহ অসংখ্য দোসরদের সুশীল পরিচয়ে রেখে গেছেন বাংলাদেশে। আর তাদের দিয়েই বাস্তবায়ন করছেন আওয়ামী এজেন্ডা, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। খুনি হাসিনার কার্যক্রম নিয়ে কোনো সমালোচনা না করে নানা ভাবে হাসিনার ন্যারেটিভ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে এসব মানুষ।
আরও পড়ুন:








