সোমবার

১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১ পৌষ, ১৪৩২

পুলিশকে ধোঁকা দিয়ে যেভাবে ঢাকা ছাড়ে দুই হামলাকারী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০৯:৫৩

শেয়ার

পুলিশকে ধোঁকা দিয়ে যেভাবে ঢাকা ছাড়ে দুই হামলাকারী
ছবি: সংগৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পর হামলাকারীরা যেভাবে ঢাকা ছেড়েছে তা যেন ফিল্মি স্টাইলেকেও হার মানিয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হাদির ওপর হামলার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূল সন্দেহভাজন হিসেবে ফয়সাল ও আলমগীরকে শনাক্ত করে এবং প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের গতিবিধি অনুসরণ করতে থাকে। তবে সন্দেহভাজনরা তাদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলো (মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য প্রযুক্তি সামগ্রী) সচল রাখলেও সেগুলো নিজেরা বহন করেনি। এসব ডিভাইস অন্য কোনোভাবে চালু রেখে বারবার সেগুলোর জায়গা পরিবর্তন করানো হচ্ছিল। পুলিশ যখন তাদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর অবস্থান ধরে ধরে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছিল, তখন তারা রাজধানী থেকে নিরাপদে বের হয়ে ময়মনসিংহ হয়ে হালুয়াঘাট পৌঁছায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে হাদিকে গুলি করার পরই তারা পল্টনের কালভার্ট রোড থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে নয়াপল্টন হয়ে শাহবাগ, বাংলামটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট হয়ে আগারগাঁও এলাকা দিয়ে মিরপুরে পৌঁছায়। যা কোনো সিনেমার দৃশ্যর চেয়ে কম না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ময়মনসিংহ সীমান্তের স্থানীয় সূত্র বলছে, ফয়সাল ও আলমগীর সেখান থেকে প্রাইভেটকারে করে আশুলিয়া হয়ে গাজীপুর দিয়ে সড়কপথে ময়মনসিংহ যায়। ময়মনসিংহের ব্রিজের পাড় থেকে বাহন পরিবর্তন করে আরেকটি প্রাইভেটকার নিয়ে হালুয়াঘাটের উদ্দেশে যাত্রা করে। প্রাইভেটকারটি হালুয়াঘাটের ধারাবাজারের একটি পেট্রোল পাম্পে গিয়ে থামে। সেখান থেকে তিনজন যুবক এসে তাদের দুজনকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে হালুয়াঘাটের ভুটিয়াপাড়ায় নিয়ে যায়। রাত আড়াইটা পর্যন্ত থেকে ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম গারো পাহাড় জেলার একটি পৌরসভা এলাকার তুরায় পৌঁছায়। গতকাল পর্যন্ত তারা সেখানেই ছিল বলে জানা গেছে।

এদিকে হাদির ওপর হামলার পর থেকে সচর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হামলার ঘটনার পর থেকেই নিবিড় নজরদারিতে থাকার তথ্য জানানোর পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের চোখে যেন ধুলো দিয়ে দেশ ছেড়ে পালাল ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টায় জড়িত প্রধান দুই সন্দেহভাজন।

হামলাকারীদের অর্ধকোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা, সীমান্তে সতর্কতা আর পাসপোর্ট ব্লক করার খবরের মধ্যেই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ দুই আততায়ী ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ও আলমগীর হোসেনের দেশ ছাড়ার তথ্য মিলেছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র এ দুজনের পালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকারোক্তি আসেনি।

এর আগে, গতকাল রোববার পুলিশ সেই মোটরসাইকেল উদ্ধারের কথা জানিয়েছে। হাদি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী। সংকটাপন্ন অবস্থায় গতকাল পর্যন্ত রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলেছে। তবে আজ সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার কথা রয়েছে হাদিকে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গতকাল রাতে এ তথ্য জানানো হয়। প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে গতকাল সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. জাফর ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি টেলিফোন কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে আজ সোমবার। গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, দুই দিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। গতকাল এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।



banner close
banner close