মঙ্গলবার

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১ পৌষ, ১৪৩২

ভারতের কান্না থামাতে পেঁয়াজ আমদানি করছে সরকার?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০১:০১

আপডেট: ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০১:০৩

শেয়ার

ভারতের কান্না থামাতে পেঁয়াজ আমদানি করছে সরকার?
সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশে পেঁয়াজ বেচতে না পেরে, দিশেহারা হয়ে সড়কেই পেয়াজ ফেলে গড়াগড়ি করতে দেখা গেছে ভারতীয় এক ব্যবসায়ীকে। আবার লোকসানের কথা বলতে গিয়ে আবাগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেও দেখা গেছে অনেক ব্যবসায়ীকে।

বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখায় ভারতের সীমান্তে মজুদ রাখা হাজার হাজার টন পেয়াজ পঁচে গেছে। পঁচা পেয়াজ দুই রুপিতে বিক্রি হচ্ছে না সেখানে। এমনকি ভাল মানের পেঁয়াজও ২০ রুপিতে নিচ্ছে না ক্রেতারা।

চলতি মৌসুমে দেশীয় উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়ে দেশের মোট চাহিদার প্রায় পুরোটাই যোগান দেয়া সম্ভব হয়েছে। তাই ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার প্রয়োজন পড়েনি। ফলে রপ্তানি না হওয়ায় চরম বিপাকে ভারতের পেঁয়াজ চাষীরা।

একদিকে বাজারে নেই দাম, অন্যদিকে হচ্ছে না রপ্তানি। এই পরিস্থিতি, চরম ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিবাদের অংশ হিসাবে পেঁয়াজের অন্তষ্টিক্রিয়াও হয়েছে কয়েকটি রাজ্যে। কষ্টের ফসল ফুল দিয়ে সাজিয়ে শেষযাত্রার আয়োজন করছে কৃষকরা।

এদিকে, দেশের বাজারে হঠাৎ কিছুটা দাম বাড়ার অযুহাতে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের কান্না থামাতেই সেখান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে কি না তানিয়ে নানা মহলে উঠেছে প্রশ্ন।

এবিষয়ে খোঁড়া যুক্তি দিয়েছেন কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলছেন, দেশে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। এরপরও বাজার স্বাভাবিক রাখতেই পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর থেকেই চরম মিথ্যাচার করেছে ভারতের কিছু গণমাধ্যম। কয়েকদিন আগে পেঁয়াজ রপ্তানি করতে না পেরে কান্নাকাটি করা দেশটির দাবি, ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় বাংলাদেশের বাজারে দাম বেড়ে পেঁয়াজ ১৫০ টাকা কেজি হয়েছে। তাই, ইউনূস সরকার বাধ্য হয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মিথ্যাচার করছে জি ২৪ ঘন্টা।

ওই গণমাধ্যমের, অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা দেশ ছে়ড়েছেন। দেশ সামলাতে নাভিশ্বাস উঠছে ইউনূস সরকারের। ভারতের সঙ্গে ব্যবসা করব না বলে গোঁসা করে বসেছিল পদ্মাপাড়ের প্রতিবেশী। কিন্তু ধীরে ধীরে সেখান থেকে সরে আসতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশ। ইলিশ এসেছে ভারতে। এবার ভারত থেকে পেঁয়াজ যাচ্ছে বাংলাদেশে। সেই পেঁয়াজের পরিমাণ ১৫০০ টন।

নিজ দেশের কৃষকদের কান্না লুকিয়ে ভারতীয় মিডিয়া মিথ্যাচার করলেও বাস্তবে বাংলাদেশে পেয়াজ উৎপাদনের যে সক্ষমতা রয়েছে, তা দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা পূরণ সম্ভব। বরং বাংলাদেশেই ১৬ নভেম্বর থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখায় বিপাকে পড়তে হয়েছে সেখানকার পেঁয়াজ চাষীদের।

তথ্য বলছে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩৮ থেকে ৪০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে কৃষকরা উৎপাদন হয় প্রায় ৩২ লাখ টন। বাকি ৭-৮ লাখ টন আমদানির ওপর নির্ভর করতে হতো, যার প্রায় ৯৯ শতাংশই আসত ভারত থেকে।

চলতি বছর ভালো ফলন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দেশীয় কৃষিপণ্য-সহায়ক নীতির কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এবার দেশীয় পেঁয়াজ দিয়েই প্রায় পুরো বছর পার করা যাবে। শিগগিরি বাজারে আসছে উৎপাদন করা নতুন পেঁয়াজ।

এর আগে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার প্রতিবছর ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে আমদানি করতো পেঁয়াজ। এতে বারবার ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের কৃষকরা। এবার অন্তরবর্তী সরকারও শেষ মুহুর্তে এসে হাসিনার দেখানো পথেই হাটছে।

তাই, আমদানির খবরে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের পেঁয়াজ চাষীরা। তারা জানিয়েছে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করলেও দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কৃষকদের দাবি ভারত থেকে আমদানি না করে দেশের চাষিদের পাশে দাঁড়ালে বাড়বে উৎপাদন সক্ষমতা।

এর আগে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে ৭ দশমিক ২৪ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছিল, যা তাদের মোট রফতানির ৪২ শতাংশ ছিল। সেখানে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মাত্র ১২ হাজার ৯০০ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এবার নতুন করে ভারত থেকে ১৫’শ টন পেয়াজ আমদানি করছে সরকার।



banner close
banner close