মঙ্গলবার

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১ পৌষ, ১৪৩২

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক না হলে পরিবর্তন আশা করা কঠিন: রেহমান সোবহান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০:১৫

শেয়ার

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক না হলে পরিবর্তন আশা করা কঠিন: রেহমান সোবহান
ছবি: সংগৃহীত

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, জাতীয় সংসদ ক্রমে প্রভাবশালী ধনী গোষ্ঠীর দখলে চলে গেছে। তারাই রাষ্ট্রের নীতি ঠিক করেছে। এ কারণেই ভঙ্গুর গণতন্ত্র দেখা গেছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক করতে না পারলে দেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আশা করা কঠিন।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন রেহমান সোবহান।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন নিয়ে আমরা যখন কথা বলি, তখন কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর বলি না। এর কারণ, আমরা কখনোই কার্যকর গণতন্ত্র পাইনি, যেখানে উন্নয়ন কেমন হবে এবং কোন ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন, তা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে চিন্তাশীল বিতর্ক হয়। গত ৫০ বছরে এসব আলোচনা কখনোই টেবিলে আসেনি। আর যতক্ষণ পর্যন্ত না এগুলো আলোচনায় আসে, ততক্ষণ সমস্যার সমাধানও সম্ভব নয়।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হকের সভাপতিত্ব অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরিয়াল ফেলো সুলতান হাফেজ রহমান, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মনজুর হোসেন এবং বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে কার্যকর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছিলো না। একটি বড় ধরনের সংস্কার প্যাকেজ এখন দেশের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর কিছু হয়ত বর্তমান সরকার করে যেতে পারে, যদিও তাদের হাতে বাস্তবে খুব বেশি সময় নেই। শেষ পর্যন্ত এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করবে একটি নির্বাচিত সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো তেমন কেউ নেই।

আলোচনার এ পর্যায়ে মঞ্চে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান মনসুরকে ইঙ্গিত করে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, তিনি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করছেন এক ধরনের স্বাধীনতা নিয়েই। সেখানে একজন নির্বাচিত অর্থমন্ত্রী থাকলে এবং একটি পূর্ণ নির্বাচিত সরকার থাকলে একই স্বাধীনতা পাওয়া যেতো?

তিনি আরও বলেন, ‘ধারণা দেয়া হয়েছে, সংস্কারগুলো নির্বাচিত সরকারকে আলোকিত করবে। তারা ভালো শাসন ব্যবস্থার পথে এগোবে এবং আমরা একই সঙ্গে ভালো গণতন্ত্র ও ইতিবাচক উন্নয়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করব। ধারণাটি আজকাল এক ধরনের রোমান্টিক চিন্তার অংশ হয়ে গেছে, যা একটি সুন্দর ভবিষ্যতের ছবি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে তারা আসলে কী করবে? তাদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য কী? রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতেই হবে। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়।

সিপিডির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের আরেকটি বড় সমস্যা ছিলো সংসদের অকার্যকারিতা। আসলে কখনোই এমন সংসদ পাইনি, যেখানে শক্তিশালী বিরোধী দল পাঁচ বছর ধরে সরকারকে জবাবদিহির আওতায় রাখবে এবং নীতিনির্ধারণী সব প্রশ্নে বিতর্ক হবে। এগুলো গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। আমাদের অভিজ্ঞতা মূলত‘নির্বাচনি গণতন্ত্র। ১৯৯১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে সরকার পরিবর্তন করেছি। সেখানেও নানা সমস্যা ছিল। ব্যতিক্রম হলো– ২০০১ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিনা বাধায় ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিএনপির কাছে। ৫২ বছরের ইতিহাসে এটুকুই আমাদের সাফল্য।



banner close
banner close