শনিবার

৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

ভারতের কিলারদের পোশাক বানাতে পিলখানা থেকে কাপড় আনেন সোহেল তাজ: সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০০:৪৬

আপডেট: ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০৯:০৪

শেয়ার

ভারতের কিলারদের পোশাক বানাতে পিলখানা থেকে কাপড় আনেন সোহেল তাজ: সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন
ছবি: বাংলা এডিশন

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, সকাল ৯টা। এদিন ঘটে যায় দেশের ইতিহাসের সব থেকে নির্মম ঘটনা। সেদিন রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের-বিডিআর দরবার হলে শুরু হয় বৈঠক। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ বক্তব্য শুরু করেন।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিডিআরের কিছু বিপদগামী সদস্য অতর্কিত হামলা চালায় দরবার হলে। পথভ্রষ্ট সদস্যদের সেদিনের ওই হামলায় ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ নিহত হন ৭৪ জন।

তবে, ঘটনাটি ছিলো পূর্ব পরিকল্পিত। ২০০৮ সাল থেকেই পরিকল্পনার শুরু। ঘটনার দিন কিছু দাবি নিয়ে বিদ্রোহ শুরু বিডিআর সদস্যরা। এ সুযোগে সেসময় আওয়ামী লীগ সরকার তাদের কাজে লাগিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটতে এবং ৫৭ চৌকচ সেনা অফিসারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ পরিকল্পনা ছিলো এসব চৌকস সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে তাদের ক্ষমতা দীর্ঘ স্থায়ী করা। সম্প্রতি স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

কীভাবে এসব সেনা অফিসারকে হত্যা করা হবে এ'বিষয়ে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলী, শেখ সেলিম, ফজলে নূর তাপস সহ বেশ কয়েকজন।

ওই দিনের বৈঠক ও পিলখানা হত্যার সাথে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের জড়িত থাকার বিষয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন। বৃহস্পতিবার তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে লাইভে এসে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি তার ওই লাইভে বলেন, শেখ সেলিমের সাথে বিডিআর সৈনিকদের পরিকল্পনা হয়েছিল মূলত অফিসারদের জিম্মি করার। এরপর সোহেল তাজ এবং শেখ সেলিমের উপস্থিতিতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর ২৪ জনের একটি কিলার গ্রুপের সাথে বৈঠক হয়। একইসাথে, শেখ ফজলে নূর তাপসকে দায়িত্ব দেয়া হয় কিলাদেরসহ বিডিআর সৈনিকদের নিরাপদে পালানোর সুযোগ করে দেয়ার। বিডিআর সদস্যরা ছাড়াও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, আ. লীগের সাবেক এমপি জাহাঙ্গির কবির নানক, মির্জা আজম, ফজলে নূর তাপস, শেখ সেলিম, লেদার লিটন এবং তোরাব আলী।

সাংবাদিক ইলিয়াস বলেন, ২০০৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুইটি গাড়ি পিলখানায় এসে বিডিআর সৈনিকদের জন্য বরাদ্দকৃত ইউনিফর্মের ০৯ থান কাপড় নিয়ে যায়।

এর আগে, সকালে দুইটি গাড়ি ভান্ডারের গেইট এ এসে হর্ন দেয় এবং দায়িত্বরত সিপাহীকে গেইট খুলে দিতে বলে। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা বলেন, তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে। এরপর গাড়ি থেকে দু’জন বেসামরিক অফিসার নেমে ভাণ্ডারে কর্তব্যরত অফিসারের সাথে কথা বলেন। এরপর সুবেদার ইসহাক ভান্ডার খুলে নতুন ইউনিফর্মের জন্য ৯টি থান কাপড় তাদের হাতে তুলে দেন।

তিনি জানান, ভান্ডারে রাখা কাপড় প্যারেড এর জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল। এমনকি তখনও ওই কাপড় সৈনিকদের জন্য ইস্যু করা হয়নি। তবে, এরকম নজিরবিহীন ঘটনা শুনে বিষ্ময় প্রকাশ করেন ভান্ডারের দায়িত্বে থাকা আরেক সদস্য হাবিলদার জসিম। এমনকি, ওই কাপড় কোথায় নেথা হচ্ছে সেটি সুবেদার ইসহাকের কাছে জানতেও চান তিনি। জবাবে ইসহাক বলেন, কাপড়গুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়া হচ্ছে। তারা বিডিআরের ইউনিফর্ম পরে প্যারেড দেখতে আসবেন। এছাড়া, জসিমকে উপরের দিকে নয়, নিচের দিকে তাকানোর পরামর্শ দেন সুবেদার ইসহাক।

ইলিয়াস তার ওই লাইভে আরও জানান, ১৭ ফেব্রুয়ারি নিজের জন্য ইউনিফর্ম বানাতে পিলখানা থেকে দর্জিকে নিয়ে যান সোহেল তাজ। দিয়েছেন শরীরের মাপও। এমনকি, ইউনিফর্ম বানানোর জন্য সদর রাইফেল ব্যাটালিয়নের মেজর মোস্তাকেও নির্দেশ দেন তিনি।

ইউনিফর্মের কাজে বিডিআর হত্যাকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ডিএডি তৌহিদ আকাশকে নিজের অফিসে নিয়ে যান সোহেল। এর কিছুদিন পরেই তাঁর কাছে ইউনিফর্ম পৌঁছে দেন ডিএডি তৌহিদ। তবে, ওই ইউনিফর্মে কোন র‍্যাংক লাগানো হয়নি, ছিলো শুধু ডিপ সাইন। এমন অভূতপূর্ব ঘটনা অন্যান্য অফিসাররা জানতে পারলে তাদের মধ্যে ব্যাপক কৌতুহল জন্ম দেয়। পরে তারা আগ্রহ নিয়ে ইউনিফর্মটি দেখেন।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার এমন খবর সামনে আসার বিষয়টি জানতে পেরেই, পালানোর চেষ্টা করেন সোহেল তাজ। তবে, বিমানবন্দর থেকে তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।



banner close
banner close