সোমবার

১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

হাসিনা-টিউলিপকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরাতে চায় দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৬:২৫

শেয়ার

হাসিনা-টিউলিপকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরাতে চায় দুদক
ছবি: সংগৃহীত

প্লট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরানো হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খান মুহাম্মদ মইনুল হাসান।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ-৪ এর বিচারক রবিউল আলম মামলার রায় ঘোষণা করলে গণমাধ্যমকে দেয়া এক ব্রিফিংয়ে তিনি একথা জানান।

রায়ে মামলার প্রধান আসামি শেখ রেহানার ৭ বছর, দ্বিতীয় আসামি টিউলিপের ২ বছর ও তৃতীয় আসামি শেখ হাসিনার ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দুদকের পিপি মইনুল হাসান বলেন, এ রায় আমাদের প্রত্যাশা মতো হয়নি। আমরা সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন চেয়েছিলাম। দুদকের সাথে কথা বলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।

পিপি আরও বলেন, যেসব দেশে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, টিউলিপসহ অন্য আসামিরা পলাতক আছে সেসব দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করব। ইন্টারপোলের সহায়তায় তাদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা নেব আমরা। টিউলিপ একদিকে বাংলাদেশের নাগরিক, আবার যুক্তরাজ্যের নাগরিক। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা টিউলিপের সাজার বিষয়টি অবহিত করব। আইনের যেসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে দেশে ফেরানো যায় সেসব প্রক্রিয়া আমরা সম্পন্ন করব।

তিনি আরও বলেন, টিউলিপ কখনো ফোন কল, কখনো অ্যাপস ব্যবহার করে শেখ হাসিনাকে প্লট বরাদ্দের জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মচারীরা এসে এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। আমরা মামলাটি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় হয়নি।

এদিকে বিদেশে অবস্থান করলেও দেশে বিচারের সুযোগ আছে প্রসঙ্গ টেনে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক পৃথিবীর যেখানে অবস্থান করুক। বিচার করতে বাধা নেই।

এছাড়া এ মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (অব.) ইঞ্জি. সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সাবেক পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। তাদের মধ্যে আসামি খুরশীদ আলম কারাগারে আটক রয়েছেন। বাকিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

গত ৩১ জুলাই এ মামলার চার্জগঠন করা হয়। বিচার চলাকালে এ মামলায় ৩২ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তারা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও গরিব দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩নং রাস্তার ৬টি প্লট শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দ দেন।

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ : নিজের নামে প্লট বরাদ্দ না থাকলেও যে কারণে যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টারে টিউলিপকে আসামি করা হয়েছে চার্জশিটে তার কারণ উল্লেখ করেছে দুদক। এতে বলা হয়েছে, ‘উৎস হতে প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় জানা যায় যে, আসামি টিউলিপ রিজওয়ানা যখন জানতে পারেন যে, তার খালা আসামি শেখ হাসিনা ক্ষমতা ব্যবহার করে তার নামে, তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের নামে পূর্বাচল নতুন শহরে প্রত্যেকে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নিচ্ছেন। তখন তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে দায়িত্বপালনকালে একইসাথে তার মা রেহানা সিদ্দিক, বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নামে একই প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তার বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে খালা শেখ হাসিনার উপর চাপ প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তার করেন। এছাড়া চার্জশিটে বলা হয়, ‘প্লট বরাদ্দ নেওয়ার জন্য বোন শেখ হাসিনার কাছে আবদার করেন শেখ রেহানাও’।



banner close
banner close