রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

'সব প্রতিবেশী দেশকে সাথে নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে'

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:০১

আপডেট: ২২ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:০২

শেয়ার

'সব প্রতিবেশী দেশকে সাথে নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে'
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন।

শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য, জ্বালানি, শিক্ষা, পর্যটন, ইন্টারনেট সহযোগিতা, পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ, পানিসম্পদ, বিনিয়োগ এবং বিমান পরিবহনসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিস্তৃত সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী টোবগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পৌঁছান। এরপর দুই নেতার মধ্যে প্রায় ৩০ মিনিটের একান্ত বৈঠক এবং প্রায় এক ঘণ্টার আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়।

প্রধান উপদেষ্টা ভুটানকে বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু উল্লেখ করে বলেন, আঞ্চলিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভুটান বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ড. ইউনূস বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ একসঙ্গে গড়ে তুলতে হবে। ভূগোল ও প্রকৃতি আমাদের একসূত্রে বেঁধেছে। আমাদের ভাগ্য একসঙ্গে ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা। তিনি দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথাও স্মরণ করেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী টোবগে বলেন, বাংলাদেশ ও ভুটানের সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ ও চমৎকার। তিনি বাংলাদেশের অবদান স্মরণ করে বলেন, মধ্যযুগে বাংলার ভিক্ষুদের মাধ্যমেই বৌদ্ধধর্ম ভুটানসহ হিমালয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি আরও বলেন, সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য দুই দেশের গভীরতর বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জরুরি। যদি আমাদের সমৃদ্ধ হতে হয়, তবে একসঙ্গেই সমৃদ্ধ হতে হবে, মন্তব্য করেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকে দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ ও ভুটান প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ)-তে সই করে।

প্রধানমন্ত্রী টোবগে জানান, ভুটান যত দ্রুত সম্ভব এফটিএতে সই করতে চায় এবং আশা করে ভুটানই হবে বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন প্রথম দেশ। তিনি বলেন, এফটিএ দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভুটানের পণ্য পরিবহনে সহায়তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন এবং দ্রুত সময়ে ভুটানের কনটেইনার ক্লিয়ারেন্স নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান।

দুই দেশের মধ্যে পর্যটন উন্নয়নে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। বাংলার বৌদ্ধ ঐতিহ্য ভুটানের পর্যটকদের আকর্ষণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন ড. ইউনূস।

তিনি আরও জানান, নীলফামারীতে বাংলাদেশ ১ হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল ও একটি মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করছে এবং ভুটানের নাগরিকরা সেখান থেকে চিকিৎসা ও চিকিৎসাশিক্ষা সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।

আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ বাণিজ্য– এই দুই বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভুটান দুটি সমঝোতা স্মারক সই করে। দুই দেশের নেতা এ সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, এ চুক্তির মাধ্যমে আরও বেশি বাংলাদেশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর ভুটানে কাজের সুযোগ তৈরি হবে, বিশেষ করে ভুটানের গড়ে ওঠা নতুন অর্থনৈতিক নগরী গেলেফুতে।

ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ চুক্তির মাধ্যমে ভুটান বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানি করবে। বৈঠকে উপস্থিত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, এ রপ্তানি ভুটানের ডিজিটাল সংযোগকে শক্তিশালী করবে এবং ডিজিটাল বিভাজন কমাতে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশ ভুটানের শিক্ষার্থীদের জন্য মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় এবং বুয়েটেও আসন বরাদ্দ করে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের দেশের অনেক শীর্ষ স্থানীয় চিকিৎসক বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, জ্বালানি উপদেষ্টা ফৌজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী সাইদুর রহমান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তাইয়েব।



banner close
banner close