ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চব্বিশের জুলাই আন্দোলন দমানোর অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে গত কয়েকদিন থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন যানবাহনে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) একই রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ফের শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগে নাশকতার চেষ্টা চালানো হয়।
নাশকতার চেষ্টায় সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে হাতিরঝিলের মধুবাগ ব্রিজে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরে যায়। হাতিরঝিল থানা পুলিশ জানায়, সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে হাতিরঝিলের মধুবাগ ব্রিজে দুর্বৃত্তরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরে যায়। যদিও এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। হাতিরঝিল থানার ডিউটি অফিসার এসআই ফুয়াদ আহমেদ বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
এর আগে বিকাল ৫টার দিকে মিরপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায়ও কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিআরটিএ এলাকায় একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে কে বা কারা এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি।
রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে আগারগাঁওয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সামনেও হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে জানায় পুলিশ। শেরে বাংলা থানার ওসি ইমাউল হক বলেন, এডিবি ভবনের সামনের সড়কে বিস্ফোরণে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, অপরাধীদের শনাক্তের চেষ্টা করছেন তারা।
রাত ৭টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশে পার্কিং করা একটি কন্টেইনারে আগুন দেওয়ার পর সেখানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায়ও কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা৷
মিরপুরের পল্লবী থানা এলাকায় মেট্রোরেলের স্টেশনের নিচেও দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সেখানে যাওয়ার আগেই তারা পালিয়ে যায়। শনিবার রাত ৭টা ২০ মিনিটে মিরপুর-১২ নম্বর মেট্রো স্টেশনের নিচে এ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পল্লবী থানার ওসি মফিজুর রহমান বলেন, মেট্রোরেলের একটি পিলারের নিচে দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভীতি সৃষ্টি করার জন্য এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায় দুর্বৃত্তরা।
এদিকে ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী মিনিবাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। শনিবার ভোরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিসের সামনে পার্কিং করা নাফ পরিবহনের মিনিবাসে এই আগুন লাগে। তাৎক্ষণিক স্থানীয় লোকজন এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বাসে কেউ না থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে বাসের সিট, গ্লাস ও ভেতরের অংশ পুড়ে গেছে।
শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) জুলহাস উদ্দিন জানান, নৈশ প্রহরী বাবু বলেছেন, আমি একটু প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পাশে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি গাড়িতে আগুন জ্বলছে, সিট, গ্লাস এগুলা পুড়ে গেছে। তবে কোনো লোকজন দেখিনি। তিনি বলেন, অগ্নিকান্ডের কারণ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। অগ্নিকান্ডটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঘটেছে নাকি কোনো নাশকতা, তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তদন্ত চলছে।
এর আগে শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) গভীর রাতে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখায় পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মাঝকান্দিতে অবস্থিত শাখায় এ নাশকতার চেষ্টা চালানো হয়। এ ঘটনায় মধুখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের রায়পুর ব্রাঞ্চের ব্যবস্থাপক নবিনা নুরুল পিয়া জানান, শুক্রবার রাত ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে দুর্বৃত্তরা ব্যাংকের মূল দরজায় পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা ব্যাংকের মূল দরজা ও জানালা দিয়ে ভেতরে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে দরজার আংশিক ক্ষতি হয়েছে। মধুখালী থানার ওসি এসএম নুরুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কে বাব কারা আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এছাড়া শনিবার রাত ৮টার দিকে গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের হারিকেন এলাকায় চলন্ত গাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্র জানায়, যাত্রীবাহী চলন্ত বাসের ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। পরে আগুন পুরো বাসে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভায়। গাছা থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম জনান, ওভারহিটে প্রথমে বাসের ইঞ্জিনে আগুন লাগে। পরে দ্রুত তা পুরো বসে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাসের চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এই ঘটনায় মহাসড়কে কিছুক্ষণের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
আরও পড়ুন:








