বৃহস্পতিবার

১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২ পৌষ, ১৪৩২

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে ইতিবাচক বিএনপি-জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ ২০:৫৭

শেয়ার

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে ইতিবাচক বিএনপি-জামায়াত
ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, বাংলাদেশে তাদের ঋণ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী— উভয় দলই অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। বুধবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আইএমএফের বাংলাদেশ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও এ তথ্য জানান।

১৩ দিনব্যাপী পর্যালোচনা মিশন শেষে বিদায়ের আগে তিনি বলেন, মিশনের সময় তারা বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের সংস্কার এজেন্ডা, দৃষ্টিভঙ্গি ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আইএমএফ প্রধান বলেন, আলোচনায় মূলত আসন্ন নির্বাচন ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক পরিবর্তনকালীন প্রক্রিয়া, দলের অগ্রাধিকার এবং সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে– এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। দলগুলো আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার বিষয়ে খুবই ইতিবাচক মত প্রকাশ করেছে। আরও একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

আইএমএফ জানিয়েছে, নতুন নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আগামী বছরের মে মাসের শেষ নাগাদ ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণের পরবর্তী কিস্তি অনুমোদনের বিষয়ে পর্যালোচনা করবে। তার আগে একটি উচ্চপর্যায়ের আইএমএফ প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে নতুন সরকারের সংস্কার অ্যাজেন্ডা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে।

বাংলাদেশের বর্তমান ৮ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতিকে ‘ভয়াবহ’হিসেবে বর্ণনা করে মিশন প্রধান বলেন, যদিও এটি দুই বছর আগের দ্বি-অঙ্ক থেকে কিছুটা কমেছে, তবুও এ হার এখনো খুব বেশি— বিশেষত নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য। তাই আইএমএফের পরামর্শ হচ্ছে- মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা পর্যন্ত কঠোর বা সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বজায় রাখতে হবে।

আইএমএফের প্রাক্কলন হচ্ছে চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী অর্থবছর শেষে তা সাড়ে ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে নীতিগত বিলম্ব বা দুর্বলতা হলে প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে এবং সামষ্টিক আর্থিক স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মুখে পড়বে।

মিশনের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে– বাংলাদেশের অর্থনীতি সামষ্টিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তবে কম রাজস্ব, আর্থিক খাতের ঝুঁকি এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি দেশের অর্থনীতিকে এখনো কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে রেখেছে বলে মন্তব্য করেছে আইএমএফ। সংস্থাটি সাহসী রাজস্ব ও আর্থিক খাত সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে, যাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যায়।

মিশনের বিবৃতিতে ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়েছে, দুর্বল ব্যাংকগুলো পুনর্গঠনে একটি জাতীয় কৌশল নিতে হবে। এর আওতায় ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির সঠিক হিসাব, সরকারি সহায়তার পরিধি নির্ধারণ, এবং আইনি কাঠামোর মাধ্যমে পুনর্গঠন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকগুলোর সম্পদমান যাচাই এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যবস্থাপনা জোরদার করার সুপারিশ করা হয়েছে।

আইএমএফ বলছে, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য এখনই রাজস্ব খাতে সাহসী সংস্কার প্রয়োজন। এর মধ্যে ভ্যাটের একক আদর্শ হার, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়, করছাড় বাতিল, সব প্রতিষ্ঠানের জন্য ন্যূনতম টার্নওভার ট্যাক্স বাড়ানো, এবং কর প্রশাসন শক্তিশালী করা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এতে সরকার সামাজিক সুরক্ষা ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে এবং আর্থিক খাতেও সহায়তা দেয়া সম্ভব হবে। একই সঙ্গে প্রতিনিধি দল মুদ্রাবিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের উপর ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দেয়।

সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাজস্ব খাতের শাসনব্যবস্থা উন্নত হচ্ছে, তবে দুর্নীতি দমন ও অর্থপাচার প্রতিরোধ কাঠামো আরও শক্তিশালী করা দরকার। বিশেষ করে যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণকে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছে আইএমএফ।



banner close
banner close