বাংলাদেশ সফরে পাকিস্তান নৌবাহিনীর জাহাজ ঘিরে অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করছে ভারতীয় গণমাধ্যম। আনন্দবাজার, আজতাক বাংলা ও নিউজ বর্তমানসহ ভারতের একাধিক গণমাধ্যম বাংলাদেশ-পাকিস্তান প্রসঙ্গ নিয়ে মনগড়া ও ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে।
মূলত, শনিবার চার দিনের শুভেচ্ছা সফরে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায় পাকিস্তান নৌবাহিনীর জাহাজ ‘পিএনএস সাইফ’। নৌবাহিনী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, জাহাজের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন সুজাত আব্বাস রাজার নেতৃত্বে আসা জাহাজটিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তান দূতাবাসের প্রতিনিধি ও নৌবাহিনীর স্থানীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করলে বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ বানৌজা স্বাধীনতা তাদের আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানিয়েছে। এই শুভেচ্ছা সফর বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নৌবাহিনীর মধ্যকার সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
এসবের মাঝে, রবিবার তিন দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে এসেছেন পাকিস্তান নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নাভিদ আশরাফ। তিনি শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণ করে একাত্তরের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
এদিন রাজধানীর বনানীতে নৌবাহিনী সদর দপ্তরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন পাক নৌবাহিনীর প্রধান।
আইএসপিআর’র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাক্ষাতে উভয়ে কুশলাদি বিনিময় করেন। দুই দেশের মধ্যে পেশাগত ও প্রশিক্ষণসংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেছেন। একইসাথে সম্পর্কোন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথাও বলেছেন তারা। এ সময় পাকিস্তান নৌবাহিনীর প্রতিনিধিদল, পাকিস্তান হাইকমিশনার, ডিফেন্স অ্যাটাশে, নৌবাহিনী সদর দপ্তরের পিএসও এবং উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তান নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নাভিদকে গার্ড অব অনার দিয়ে স্বাগত জানান নৌবাহিনী প্রধান তাকে স্বাগত জানান এম নাজমুল হাসান।
তবে, এ বিষয়টিকে এত অতিরঞ্জিত করে ভারতীয় গণমাধ্যম তা প্রকাশ করছে, যা এক পর্যায়ে ভুয়া ও মিথ্যা তথ্যে পরিণত হচ্ছে। এ বিষয়ে ভারতের আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, পাকিস্তানের যুদ্ধজাহাজ নোঙর করল চট্টগ্রামে! পাক জওয়ানেরা ঘুরে দেখবেন বাংলাদেশের ঘাঁটি, ঢাকায় বৈঠক সামরিক প্রধানদের।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে ঢাকা এবং ইসলামাবাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা নাকি, ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের আর্মিও নাকি পাকিস্তানের দখলে'?, একই সাথে বাংলাদেশি নৌ সেনাকে স্পেশাল ট্রেনিং দিচ্ছে পাকিস্তান, এমন মুখরোচক টাইটেল দিয়ে বিভ্রান্তি মূলক খবর প্রকাশ করছে দেশটির আজতাক বাংলা নামের একটি গণমাধ্যম।
এছাড়াও বিভ্রান্তি ছড়াতে আরও একধাপ এগিয়ে নিউজ বর্তমান। ১৯৭১ সালে হারিয়ে যাওয়া বড় ভাইকে নাকি খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ। যা খুঁজে এনে দিয়েছে ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পাকিস্তান প্রীতি দেখে নাকি তাই মনে হচ্ছে, এমনটাই উল্লেখ করেছে গণমাধ্যমটি।
চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তান জাহাজ ভেড়ায় বাংলাদেশের বহু মানুষ আতংকিত, ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তি সরকার যা শুরু করেছে, তাতে আর পাকিস্তানিদের হাত থেকে বাংলাদেশকে বচানো যাবেনা বলেও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ভারতের গোদী মিডিয়া।
তবে, প্রতি বছরই বাংলাদেশের সাথে বন্ধু প্রতিম দেশগুলো সাধারণত এ ধরনের সফর করে থাকে। এটি এক ধরনের সাধারণ প্রক্রিয়া বলে জানান, সমারিক বিশ্লেষক এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির।
তবে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা পালানোর পর থেকে, অন্তর্বর্তি সরকারকে সহ্য করতে পারছে না ভারত। এরই জের ধরে ভারতীয় মিডিয়াগুলো পরিকল্পিতভাবে এ ধরণের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছ্বে বলে মনে করছেন এই সমারিক বিশ্লেষক।
তিনি আরও বলেন, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে শুধু পাকিস্তানই নয়, তুরস্ক, চিন, ইরানসহ বেশ কিছু বন্ধুপ্রতিম দেশের সাথে একইভাবে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
হাসান নাসির বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৃত স্বাধীনতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতে দেশি বিদেশি কোন চক্রান্তে এটিকে নস্যাৎ করতে দেয়া যাবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসবে জনগণকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া উচিৎ বলেও মনে করেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:








