বৃহস্পতিবার

১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২ পৌষ, ১৪৩২

ড. জাকির নায়েকের বাংলাদেশ সফরে ভারতের আপত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর, ২০২৫ ২০:০৪

শেয়ার

ড. জাকির নায়েকের বাংলাদেশ সফরে ভারতের আপত্তি
সংগৃহীত ছবি

গত কয়েকদিন ধরেই প্রচারণা চলছে যে, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক আয়োজনে অংশ নিতে আগামী ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ সফর করবেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইসলামী বক্তা ড. জাকির আবদুল করিম নায়েক।

তিনি ঢাকায় এলে তাকে যেন গ্রেপ্তার করে দিল্লির হাতে তুলে দেওয়া হয়ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের এমন বক্তব্যের পর এ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

ড. জাকির নায়েকের আসন্ন সফর প্রসঙ্গে গত ৩০ অক্টোবর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলন করে। সেসময় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল বলেন,

জাকির নায়েক একজন পলাতক আসামি। তিনি ভারতে ওয়ান্টেড। তাই ভারত আশা করে, তিনি যেখানেই যান না কেন, সংশ্লিষ্ট দেশ তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

যদিও তার ঢাকায় আসার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো স্পষ্ট বক্তব্য আসেনি। তবে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বরাত দিয়ে কয়েকটি স্থানীয় গণমাধ্যম দাবি করে যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানামুখী ব্যস্ততার কারণে জাকির নায়েককে এখনই বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেওয়া হবে না।

এ ছাড়াও, বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সময়ে তার এই সফরের অনুমতি না দেওয়াই ভালো হবে বলে মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকেই দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সূত্র।

ড. জাকির নায়েক ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত নানা বিষয়ে বক্তব্য দেন ও বিতর্কে অংশ নেন। তিনি তার বক্তৃতায় কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন ধর্মের তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইসলামের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।

তার আলোচনার “ইসলাম ও আধুনিক বিজ্ঞান, “ইসলাম ও খ্রিস্টধর্ম এবং “ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বিষয়বস্তুগুলো বিশেষভাবে জনপ্রিয়। তার বক্তৃতা শুনে অসংখ্য খ্রিষ্টান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন বলেও জানা যায়।

জানা যায়, কুরআনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও গবেষণাভিত্তিক ইসলামী আলোচনার কারণে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বহু হিন্দু ইসলাম গ্রহণ করায় ভারত সরকারের রোষানলে পড়তে হয় ড. জাকির নায়েককে।

২০১৬ সালে নায়েক মালয়েশিয়ায় অবস্থানকালে নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার তার বিরুদ্ধে ‘ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার ও ‘অর্থপাচার-এর অভিযোগ আনে এবং তার প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে তার প্রতিষ্ঠিত ‘পিস টিভি-র সম্প্রচারও বন্ধ করে দেয়।

ড. নায়েক মোদী সরকারের সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ভারতে না ফিরে মালয়েশিয়ায় স্থায়ী আশ্রয় নেন। ভারতের রাষ্ট্রীয় অনুসন্ধান সংস্থা (NIA) নায়েককে গ্রেপ্তারের জন্য তিনবার ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে। তবে পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে ইন্টারপোল তিনবারই আবেদনটি খারিজ করে দেয়।

২০১৬ সালের ১ জুলাই ভারতের ইঙ্গিতে বাংলাদেশে ‘হলি আর্টিজান হামলাকে জঙ্গি হামলা হিসেবে উপস্থাপন করা হয় এবং তখন নায়েককে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়। বলা হয়, ঢাকায় সন্ত্রাসী আক্রমণে জড়িত পাঁচ হামলাকারীর মধ্যে একজন ফেসবুকে জাকির নায়েকের অনুসারী ছিলেন।

সেসময় মোদী-হাসিনা মদদপুষ্ট বাংলাদেশি পত্রিকা ডেইলি স্টার ওই খবর প্রকাশ করলে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, “জাকির নায়েকের বক্তব্য তাদের জন্য নজরদারির বিষয়।

যদিও ভারতের সিআইডি বিভাগের তদন্তে নায়েকের বক্তৃতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যে কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। মিথ্যা সংবাদ প্রচারের কারণে পরে ডেইলি স্টার ড. জাকির নায়েকের কাছে ক্ষমা চায়।

সেসময় কর্তৃপক্ষ জানায়, পত্রিকাটি কেবল এটিই উল্লেখ করেছিল যে কিছু তরুণ তার বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছে। তবে ওই প্রতিবেদনের পর মোদীর ইশারায় ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচারও বন্ধ করে দেয়।

তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন,

পিস টিভি মুসলিম সমাজ, কুরআন, সুন্নাহ, হাদিস, বাংলাদেশের সংবিধান, আমাদের সংস্কৃতি, আচার-প্রথা ও রীতিনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

ড. নায়েককে নিয়ে ভারতের নানামুখী ষড়যন্ত্র এখনো চলমান। তাই তার বাংলাদেশ সফরের খবরে নড়েচড়ে বসেছে রাষ্ট্রটি।

বাংলাদেশে মোদীর মদদপুষ্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরও ভারতীয় প্রভাব অব্যাহত থাকায় অনেকেই বলছেনবাংলাদেশ এখনো ভারতের সুরেই কথা বলছে।

গত শনিবার জাকির নায়েকের সফর ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস. এম. মাহবুবুল আলম বলেন,

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র একজন বিশিষ্ট ইসলামী স্কলার বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের সম্ভাব্য বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে যে মন্তব্য করেছেন, তা আমাদের নজরে এসেছে।

তিনি আরও বলেন,

আমরাও বিশ্বাস করি, কোনো দেশের অন্য দেশের কোনো অভিযুক্ত বা পলাতক ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।

ড. নায়েকের বাংলাদেশ সফর নিয়ে বাংলাদেশের এমন নতজানু মন্তব্যের পর সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—“যদি অন্য দেশের কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়া অনুচিত হয়, তাহলে ২০২৪ সালের গণহত্যায় অভিযুক্ত ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ভারত কীভাবে আশ্রয় দিল?”

গুঞ্জন উঠেছে, আগামী ২৮-২৯ নভেম্বর রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ঢাকা আসতে পারেন ড. জাকির নায়েক। রাজধানী ঢাকার বাইরেও তার বেশ কিছু ধর্মীয় আয়োজনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে বলেও জানা গেছে।



banner close
banner close