বুধবার

১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২ পৌষ, ১৪৩২

আ. লীগের সময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম; ভোল পাল্টেছেন কাজী মুজিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১৪:১৪

আপডেট: ৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১৪:৩১

শেয়ার

আ. লীগের সময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম; ভোল পাল্টেছেন কাজী মুজিব
ছবি: সংগৃহীত

ভিডিও ফুটেজটির বক্তব্য শুনলে যে কারো মনে হতে পারে, আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনাকে সহ্যই করতে পারেন না তিনি। সুযোগ পেলেই কথা বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। তবে বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। কাজী মজিবুর রহমান ওরফে কাজী মুজিব বড় মিয়া, নামে পরিচিত এই ব্যক্তি ছিলেন, বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তবে ২০২৪ সালের পাঁচ আগস্টে স্বৈরাচার হাসিনা পালানোর পর থেকেই নিজের ভোল পাল্টান মজিবুর। এর পর থেকেই বহাল তবীয়তেই রয়েছেন। তবে, বর্তমানে অন্তর্বর্তি সরকারের সহযোগী ভুমিকায় কাজ করতে দেখা গেছে তাকে।

এক সময় আওয়ামী লীগের ছত্র ছায়ায়, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতো বলে অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ বছরের শুরুতে এনিয়ে মামলাও করেছেন ভুক্তভোগীরা।

ঘটনার দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে বান্দরবানের আওয়ামী লীগ নেতা দুই সহোদর বড় মিয়া ও ছোট মিয়াসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেছেন ব্যারিস্টার কাজী ইসতিয়াক হোসাইন।

অভিযোগ বলা হয়েছে, বাদী ব্যারিস্টার ইসতিয়াকের বাবা কাজী মহিতুল হোসাইনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় বড় মিয়া ও ছোট মিয়াসহ অন্যান্য আসামিরা। ২০০৯ সালের তিন সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো ওই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন মহিতুল।

এ বিষয়ে মহিতুল বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যে এক নম্বর আসামি বড় মিয়ার নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছিলেন সন্ত্রাসীরা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় সেসময় কোনো বিচার পাননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তবে অভিযোগের বিষয়ে মামলার এক নম্বর আসামি কাজী মুজিবর রহমান বলেন, যে কেউ অভিযোগ করতেই পারেন। অভিযোগ তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অপরাধির বিচার হবে। এ নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামাচ্ছেন তিনি।

এছাড়াও সম্প্রতি, সেনাবাহিনীর নাম ব্যবহার করে মজিবুর ওরফে কাজী মুজিবের বিরুদ্ধে নানা কু কর্মের অভিযোগ এনেছে পার্বত্য চট্রগ্রাম নাগরিক পরিষদের সদস্যরা। এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পত্রও এসেছে বাংলা এডিশনের কাছে।

সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বান্দরবান জেলায় বসবাসরত বরিশাল থেকে আগত বিভিন্ন মামলার আসামিদেরকে নিয়ে মুজিব বাহিনী গড়ে তোলেন এই কাজি মুজিব। এই বাহিনীর কাজ ছিলো চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জায়গা দখল ও সরকারী খাস জমি দখল করা।

তার হামলার শিকার হয়ে ঘর বাড়ি ছাড়া হয়েছেন অনেক অসহায় ও গরীব পরিবার। এছাড়াও আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর, বাঙালি জনগোষ্ঠীর পক্ষে জেলা পরিষদের একমাত্র সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন মুজিবুর।

এরপর ২০১৫ সালে তার স্বেচ্ছাচারিতা এবং বিভিন্ন অপকর্মের কারণে জেলা সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে মুজিবকে। তবে পরবর্তিতে ২০১৯ সালে এসে পার্বত্য চট্রগ্রাম নাগরিক পরিষদে যোগ দেয়ার পর পুরো সংগঠনকে চাঁদাবাজির মুল কেন্দ্র হিসেবে পরিণত করেন তিনি।

২০২৪ সালের পাঁচ আগস্টের পর থেকেই সেনা বাহিনীর নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা চাঁদাবাজি করারও অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাশাপাশি তার পেটোয়া বাহিনী নিয়ে বিএনপি নেতা কর্মীদের ওপর হামলাসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগও করেছেন স্থানীয়রা।

এদিকে, এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মজিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে বাংলা এডিশন টিম। তবে, এতে কোনো সাড়া দেননি তিনি।

বাংলা এডিশনের স্থানীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে জানা গেছে, এত অভিযোগের পরেও বেশ বহাল তবীয়তেই রয়েছেন বড় মিয়া। নিজের অবস্থান থেকে বেশ সাচ্ছন্দে তার কাজকর্ম পরিচালনা করছেন তিনি। তবে, প্রশাসন কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরণের পদক্ষেপ না নিলেও তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে আসছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

তবে আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে বিভিন্ন সময় মানুষের ওপর নির্যাতন চালানো মুজিব ঠিক কি করে এখনো বহাল তবীয়তে রয়েছেন, সেই প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।

বিস্তারিত ভিডিও লিংকে: https://www.youtube.com/watch?v=o64V12D5TPo



banner close
banner close