বৃহস্পতিবার

১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩ পৌষ, ১৪৩২

অভিনব কায়দায় ভূমি দখলের পাঁয়তারা হামীম গ্রুপের: ভিডিও চিত্র সহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২ নভেম্বর, ২০২৫ ২১:৪৬

আপডেট: ২ নভেম্বর, ২০২৫ ২১:৪৯

শেয়ার

অভিনব কায়দায় ভূমি দখলের পাঁয়তারা হামীম গ্রুপের: ভিডিও চিত্র সহ
ছবি: সংগৃহীত

একসময় আট টাকা রিকশাভাড়া দেওয়ার সামর্থ্যও ছিল না। সেখান থেকে অল্প সময়ের ব্যবধানে হয়ে উঠেছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ ধনী। বলছি, আব্দুল কাদের আজাদের কথা। বেশিরভাগ মানুষ তাঁকে এ কে আজাদ হিসেবেই চেনেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি। সবশেষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্যও ছিলেন তিনি।

প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াছ হোসাইনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ফিফটিন মিনিটস-এ উঠে এসেছে, বন বিভাগের মোট ১৬ একর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে হা-মীম ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। বিষয়টি নিয়ে মামলাও চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার এক কর্মকর্তা। বিস্তারিত তথ্যের জন্য বন বিভাগের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।

এ ছাড়া ফরিদপুরের অনাথের মোড় এলাকায় পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে তীব্র বিরোধ দেখা দিয়েছে। কবির দ্বিতীয় ছেলে ড. জামাল আনোয়ারের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা অভিযোগ করেছেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজাদ এবং তাঁর ভাই বিলাল হোসেন কবির পরিবারের জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

রাজিয়ার দাবি, কবির রেখে যাওয়া প্রায় ৫১ শতাংশ জমির অংশবিশেষ কেনার নামে আজাদ পরিবার পুরো জমি দখলের চেষ্টা করছে। এই জমিতে কবির ছেলে জামাল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন ‘পল্লীকবি জসীমউদ্দীন শিক্ষানিকেতন ও একটি দাতব্য হাসপাতাল। তবে দখল-নৈরাজ্যের কারণে সেই স্বপ্ন থেমে গেছে।

জামালের মৃত্যুর পর সম্পত্তি দখলে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে একটি প্রভাবশালী মহলএমন অভিযোগ করেছেন কবির পুত্রবধূ। তাঁর দাবি, “ওয়ারিশি জটিলতার সুযোগ নিয়ে তাঁদের জমি হাতিয়ে নিচ্ছে আজাদ পরিবার।

রাজিয়া বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর দুই সন্তানের নিরাপত্তা নিয়েও রয়েছেন আতঙ্কে। কারণ আজাদের ভাই বিলাল শতাধিক লোক নিয়ে বাড়ির নির্মাণকাজ বন্ধ করে প্রবেশপথে প্রাচীর তুলে দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কবিপুত্রের মৃত্যুর পর তাঁর প্রথম পক্ষের ছেলে, জার্মানপ্রবাসী অ্যান্ড্রে আনোয়ারকে ব্যবহার করে দখলদার চক্র আরও সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে। রাজিয়ার দাবি, অসুস্থ অ্যান্ড্রে পরিস্থিতি বুঝতে না পেরে নিজের অংশ বিক্রি করে দিয়েছেন আজাদ পরিবারের লোকদের কাছে।

এ ঘটনায় রাজিয়া থানায় একাধিক অভিযোগও দায়ের করেছেন। আদালতের নির্দেশে সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে ড. জামালের পক্ষে রায়ও রয়েছে। তবে সেই রায়ের পরও দখলচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

গত বছরের ২০ জুন ‘পল্লীকবি জসীমউদ্দীন শিক্ষানিকেতন-এর জমি দখলের প্রতিবাদে কবি পরিবার ও এলাকাবাসী মানববন্ধন করেন। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, এ কে আজাদ কবির পরিবারকে জমি বিক্রি করে এলাকা ছাড়ার হুমকিও দিচ্ছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন রাজিয়া।

গিরগিটি রাজনীতির অভিযোগও রয়েছে আজাদের বিরুদ্ধে। নিজেকে অনেক সময় স্বতন্ত্র দাবি করলেও আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর রয়েছে গভীর সম্পর্ক। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতলেও ছিলেন ডামি নির্বাচনের অংশীদার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের ব্যানারে তাঁর উপস্থিতিই সেই প্রমাণ দেয়।

২০২৪ সালে মহিলা লীগের আয়োজিত ফরিদপুরের এক আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন আজাদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও পোস্টারে তাঁর ছবির পাশেই ছিল শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার গুণকীর্তনে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন এ কে আজাদ। গত ১৬১৭ বছর দেশের মানুষের ওপর যে স্টিমরোলার চালিয়েছেন শেখ হাসিনা, সে বিষয়ে কখনও প্রতিবাদ করে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি তিনি।



banner close
banner close