বুধবার

১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২ পৌষ, ১৪৩২

নজরুলের অবৈধ সম্পদের পাহারাদার বিএনপির রফিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১৫:১১

আপডেট: ৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১৮:৫৮

শেয়ার

নজরুলের অবৈধ সম্পদের পাহারাদার বিএনপির রফিক
ছবি: সংগৃহীত

তৃণমূল পর্যায়ের এই ব্যক্তিরা কেউই বড় কোন পদে থাকা নেতা নন। নিতান্তই দলকে ভালোবেসে, দলের আদর্শকে লালন করে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে লড়াই করা কর্মী মাত্র।

বিএনপির সাধারণ এই কর্মীদের একেক জনের নামেও আ.লীগের শাসনামলে পুরো সময় জুড়ে দেয়া হয়েছে একের পর এক মামলা। ঘরে থাকতে পারেননি তারা সতের বছরের বেশিরভাগ সময়ই! তাদের গোটা পরিবারকেও কাটাতে হয়েছে চরম দুর্ভোগে! এমনকি পরিবারের কোনো সদস্য মারা গেলে দিতে পারেনি মাটিও।

অন্যদিকে, ফ্যাসিস্ট হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এক্সিম ব্যাংক ও আলোচিত নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সাইদুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর নুরুল আফসার, কাজী রফিকুল ইসলাম এই চার বন্ধু একসাথে শুরু করেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসা।

চার বন্ধুর নাম থেকে একটি করে অক্ষর নিয়ে রান্স রিয়েল স্টেট নামে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস এ ২০০৮ সালে গড়ে তোলা হয়েছে এই প্রতিষ্ঠান!

এই চার জনের একজন বগুড়া এক আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম! অর্থাৎ, নানা অপরাধে উঠে আসা নাম, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যা মামলার আসামী, হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহচর নজরুলের সাথে বিএনপির এই নেতা অংশিদারী ব্যবসা শুরু করেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার শুরু থেকেই।

এ নিয়ে ক্ষুব্ধ কাজী রফিকের রাজনৈতিক এলাকার বিএনপি কর্মী-সমর্থকরাও। তারা বলছেন, হাসিনার মদদপুষ্ট নজরুলের ব্যবসায়িক অংশিদার হয়ে ২০০৮ এর পর ১৮-এর নির্বাচনে মাত্র একবার এলাকায় এসেছেন তিনি। এর আগে পরে তাকে এলাকায় দেখেনি কেউ। অথচ সম্প্রতি নিবার্চানি আমেজ শুরু হওয়া বেড়েছে রফিকের তৎপরতা।

এদিকে, বাংলা এডিশন টিমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নজরুল- রফিকুল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর সব তথ্য। জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য বলছে, ২০০৮ থেকে ১৫ পর্যন্ত রানস্ রিয়েল স্টেট এর মালিকানায় ছিলেন, কাজি রফিক-নজরুল মজুমদার -সাইদুর রহমান, নুরুল আফসার এবং তাদের সহধর্মিনীরা।

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নজরুল ও তার সহধর্মিণী নিজেদের শেয়ার হস্তান্তর করেন সাইদুরের কাছে! এরপর থেকে বাকিরা থাকলেও রান্স রিয়েল স্টেট এর প্রধান ব্যক্তি হয়ে ওঠেন বিএনপি নেতা কাজী রফিকুল ইসলাম।

তবে, ২০০৮ থেকে ১৫ পর্যন্ত রান্স এর সাথে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চুক্তিবদ্ধ হওয়া জমির মালিকরা বলছেন চুক্তি হলেও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুলের প্রভাব কাজে লাগিয়ে বছরের পর বছর ধরে কেবল সাইনবোর্ড টানিয়ে রাখা ছাড়া আর কিছুই করেনি কোম্পানিটি।

গুলশানের আরেক ভুক্তভোগী জানালেন কেবল চুক্তিই নয়, বছরের পর বছর ধরে তাদের বাড়িটি দখল করে নজরুলের নাসা রিয়েল স্টেট এর অফিস চালানো হয়েছে। দেয়া হয়নি কোন ভাড়া। আর বাড়ির বাইরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে রান্স রিয়েল স্টেট এর বিশাল বিলবোর্ড।

রান্স রিয়েল স্টেট এর চুক্তিপত্র দেখিয়ে ১৫ কাঠা এই জমির মালিক অভিযোগ করেন, চুক্তি বাস্তবায়নে একশো ৮৭ টি চিঠি লিখেও কোন সমাধান পাননি তিনি। উল্টো, ২৪'র গণঅভ্যুত্থানের আগে নজরুলের ক্ষমতার দাপট আর তারপরবর্তী সময় থেকে রফিকুল ফাঁসাচ্ছেন একের পর এক মিথ্যা মামলায়।

এদিকে, মহাখালী ডিওএইচএস এবং গুলশানের বিশাল এই জায়গাগুলোতে গেলো দেড় যুগ ধরে রান্স রিয়েল স্টেটের বিলবোর্ড ঝুলিয়ে রাখলেও সিটি কর্পোরেশন থেকে কোন নকশারও অনুমতি চাওয়া হয়নি।

এসব বিষয়ে জানতে বাংলা এডিশন টিম রান্স রিয়েল স্টেট এর ঠিকানায় যায়। তবে, সরেজমিনে দেখা গেছে, আগে থাকলেও এখন সেখানে কেবল রফিকুলের ও.কে রিয়েল স্টেট এর কার্যক্রম চলছে। রান্স এর অফিস এখন কোথায় তা জানেনও না এখানকার কেউ।

রান্স রিয়েল স্টেট এর ওয়েব সাইট দিন পনের আগেও সচল থাকলেও তা আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, মিলছেনা তা দের মোবাইল ফোনেও! অথচ, প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকটি জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের চুক্তি করে প্রায় পনের বছর ঝুলিয়ে রেখেছে তাদের বিলবোর্ড!

এ অবস্থায় রিহ্যাব জানায়, অভিযোগ দিলে ব্যবস্থার নিবে তারা।

এদিকে, রান্স এর খোঁজে গিয়ে পাওয়া ও.কে রিয়েল স্টেট এর তথ্য যাচাইয়ে তাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক কাজী রফিক তার স্ত্রী এবং তিন মেয়ে। তাদের সম্পন্ন হওয়া প্রকল্পের তালিকায় ডিওএইচএস এর এই বহুতল ভবনের নাম-ঠিকানা উল্লেখ থাকলে সেখানে গিয়ে দেখা যায় তাতে ও.কে নয় ডেভেলপার কোম্পানি হিসেবে লেখা রান্স রিয়েল স্টেট এর নাম।

শুধু তাই নয়, অভিযোগ রয়েছে, রান্স রিয়েল স্টেট পুরো গিলে খেয়েছে রফিকের ও.কে রিয়েল স্টেট। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হয়েও এক সময় আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নজরুল শেল্টারে চালিয়েছেন ব্যবসা। ফ্যাসিস্টের ১৬ বছরের দুঃশাসনে কেন্দ্রীয় নেতা হয়েও রফিকের বিরুদ্ধে হয়নি একটি মামলাও। তার এসব অপকর্মের বিষয়ে জানতে টিম বাংলা এডিশন টানা দুইদিন ধরে তার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেনি। মহাখালি ডিওএইচএসরে অফিসে গিয়েও তার সন্ধান মেলেনি।

অভিযোগ রয়েছে, কাজী রফিক তার অন্যতম ব্যবসায়ীক সহযোগী ও বন্ধু নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুলের সাথে আওয়ামী শাসনামলে নানা সুবিধা ভোগ করেছেন। আর এখন, আওয়ামী লীগ পতনের পর নজরুল ইসলামের চেরাহায় দেখা যাচ্ছে এই কাজী রফিককে।

রফিকের বন্ধু নজরুল ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তি। আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে গড়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। তার বিরুদ্ধে ২০২৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৭৮২ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ সঞ্চয়ের অভিযোগে মামলাও করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন, দুদক।

এর আগে, মজুমদার ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে যুক্তরাজ্যে থাকা প্রায় ছয়শ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেয় আদালত। নাসা গ্রুপের ওয়েব সাইটে গিয়ে রান্স রিয়েল স্টেট এর নাম মিললেও, ঠিকানা দেয়া যুক্তরাজ্যের।

২৪ এর পাঁচ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর ২৫ আগস্ট নজরুলের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে সরকার। একই সাথে তাঁর স্ত্রী নাসরিন ইসলামসহ ছেলে-মেয়ের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত করা হয়েছে। এক অক্টোবর রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বিস্তারিত ভিডিও লিংকে: https://www.youtube.com/watch?v=gvuaLD0lxWU



banner close
banner close