চলতি শীত মৌসুমে সারের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। ডিলারদের একটি অসাধু সিন্ডিকেট সার মজুত ও পাচার করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকারি ভর্তুকির সার না পেয়ে কৃষকেরা বাধ্য হয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি দামে সার কিনছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরাসরি কৃষকের কাছে সার বিক্রির নিয়ম থাকলেও ডিলাররা গোপনে অতিরিক্ত দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সার বিক্রি করছে। আবার কেউ কেউ গুদামে সার মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে, কেউ পাচার করছেন জেলার বাইরে। সারা দেশের জেলা ও উপজেলা ডিলাররা একই কারসাজি করে কৃত্রিম সার সংকট করে যাচ্ছে বছরের পর বছর।
গত শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাইপাস মোড়ে অবৈধভাবে সার বিক্রির সময় ৪১৬ বস্তা সার জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় বিসিআইসি ডিলার ফারুক আহম্মেদকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ।
সেদিনই পাটগ্রাম শহরের সার ব্যবসায়ী হায়দার আলীর দোকানে অভিযান চালিয়ে অবৈধ মজুদ ও অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রির অভিযোগে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় আরও ১,৩০০ বস্তা সার জব্দ করা হয়।
এছাড়া গত ২৬ সেপ্টেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও জেলা কৃষি বিভাগের যৌথ অভিযানে জেলার বাইরে পাচারের সময় ১৯৩ বস্তা সার জব্দ করা হয়। সদর উপজেলার কুলাঘাট বিজিবি চেকপোস্ট এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়। ওই সারগুলোর মালিক এখনো শনাক্ত হয়নি। স্থানীয় সূত্রের দাবি, জব্দকৃত সার প্রভাবশালী এক বিএনপি নেতার।
অভিযোগ রয়েছে, সারসহ আটক চার ট্রলি চালককে (শামীম হক, মজমুল হোসেন, রেজাউল করিম ও আবুল কাসেম) স্থানীয় এক ওষুধের দোকানে নিয়ে কেবল নাম-ঠিকানা নিয়ে ছেড়ে দেয় কৃষি বিভাগ। এতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাটের বিএডিসি গুদামে পর্যাপ্ত সার মজুত রয়েছে। অক্টোবর মাসে টিএসপি বরাদ্দ ১,৭১৫ মেট্রিক টন, ডিএপি ৩,২৪২ টন এবং এমওপি ১,০৪৪ টন।
সরকার ডিলারদের কাছে টিএসপি প্রতি কেজি ২৫ টাকা, ডিএপি ১৯ টাকা ও এমওপি ১৮ টাকায় বিক্রি করছে। ডিলাররা প্রতিকেজিতে সর্বোচ্চ ২ টাকা লাভ করতে পারবেন। সরকার প্রতিকেজি সারে ৫৫ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ, ডিলারদের কাছ থেকে নির্ধারিত দামে সার না পেয়ে তারা খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে কেজি প্রতি ৮–১০ টাকা বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল হাই বলেন, ডিলারদের কাছে গেলে বলে সার শেষ, কিন্তু খুচরা দোকানে গেলে সার পাওয়া যায়। তখন আমাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
সদর উপজেলার কৃষক আব্দুল করিম বলেন, জেলার বাইরে সার পাচার হলে শীতকালীন মৌসুমে ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে। এতে শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলের চাষে বড় ক্ষতি হবে।
জেলা সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল হাকিম বলেন, চরাঞ্চলে এখন চাষাবাদ বেড়ে গেছে, ফলে সারের চাহিদা বেশি। কিন্তু বরাদ্দ তুলনামূলক কম হওয়ায় সংকট দেখা দিচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ করলে সমস্যা থাকবে না। তবে কেউ যদি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী জেলায় সারের কোনো ঘাটতি নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার আশায় কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
তিনি আরও জানান, নতুন সার নীতি চূড়ান্ত হয়েছে, যা আগামী জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এতে ডিলারদের কৃত্রিম সংকট তৈরির সুযোগ থাকবে না।
তবে জব্দকৃত সারের মালিক শনাক্ত না হওয়ার প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
আরও পড়ুন:








