বুধবার

১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২ পৌষ, ১৪৩২

বাংলাদেশকে করাচি বন্দর ব্যবহারে পাকিস্তানের সম্মতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১৫:১১

শেয়ার

বাংলাদেশকে করাচি বন্দর ব্যবহারে পাকিস্তানের সম্মতি
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ২০ বছর পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করাই ছিল এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পাকিস্তানের পক্ষে দেশটির ফেডারেল অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী আহাদ খান চীমা নেতৃত্ব দেন।

প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে কৃষি গবেষণা, হালাল ফুড, তথ্যপ্রযুক্তি, নৌপরিবহন ও ব্যাংকিং খাতে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ পাকিস্তানি বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান জানিয়েছে, বাংলাদেশ চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যে করাচি বন্দর ট্রাস্ট (কেপিটি) ব্যবহার করতে পারবে।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন করে ৫০০টি বৃত্তি দেয়ার প্রস্তাব করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে তাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনের আগ্রহও জানিয়েছে।

ব্যাংকিং খাতে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাবের পাশাপাশি পাকিস্তান নিরাপত্তা সামগ্রী মুদ্রণে ব্যবহৃত নিরাপত্তা কালি ও অন্যান্য উপকরণের আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেয়ারও আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

স্বাস্থ্য খাতে ভ্যাকসিন গবেষণা ও পরিবার পরিকল্পনা মডেল গ্রহণে বাংলাদেশ–পাকিস্তান যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে বলে বৈঠকে জানানো হয়। পাকিস্তান বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্য মডেল অনুসরণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

এছাড়া গবাদিপশুর জাত উন্নয়নে পাকিস্তানের উন্নত জাতের গরুর সিমেন বাংলাদেশে রপ্তানির বিষয়ে দুই দেশই সম্মত হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি সহযোগিতা বাড়াতে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান। মেরিটাইম সহযোগিতা জোরদার করতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও পাকিস্তান ন্যাশনাল শিপিং করপোরেশনের মধ্যে ইতোমধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

চিনি শিল্পে কারিগরি সহযোগিতা এবং হালাল ফুডে মান নিয়ন্ত্রণ জোরদারে পাকিস্তান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে পাকিস্তান হালাল অথরিটি (পিএইচএ) ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুই যুগ পর বাংলাদেশ পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কৃষি, বাণিজ্য, আইটি, খাদ্যসহ নানা খাতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে, যা দুই দেশের জনগণের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

পাকিস্তানের জ্বালানিমন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক বলেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক বোঝাপড়াও বাড়বে।

২০০৫ সালের পর এ ধরনের বৈঠক আর হয়নি। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। কয়েক দফায় দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করেছেন।



banner close
banner close